যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করার অভিযোগে তিন বুলগেরিয়ান নাগরিককে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত।
ক্যাটরিন ইভানোভা (৩৩), ভানিয়া গ্যাবেরোভা (৩০) ও তিহোমির ইভানচেভ (৩৯)—এই তিনজন ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে জড়িত ছিলেন। তারা রাশিয়ার জন্য তদন্তমূলক সাংবাদিক, সামরিক স্থাপনা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর নজরদারি করতেন।
গুপ্তচরবৃত্তির নীলনকশা
তাদের কাজের বিস্তারিত তথ্য হাজার হাজার বার্তায় পুলিশের হাতে এসেছে, যেখানে অপহরণ, হত্যা ও ব্ল্যাকমেইলের পরিকল্পনার তথ্য রয়েছে।
আদালতে অভিযোগ আনা হয় যে, তারা যুক্তরাজ্যে বসে ইউরোপজুড়ে অপারেশন পরিচালনা করতেন। তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল:
- তদন্তমূলক সাংবাদিক ক্রিস্টো গ্রোজেভ ও রোমান ডোব্রোখতোভ—যারা রাশিয়ার বিষাক্ত নার্ভ এজেন্ট হামলার তথ্য ফাঁস করেছিলেন।
- জার্মানির মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ‘প্যাচ ব্যারাকস’—যেখানে ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল।
- কাজাখস্তানের সাবেক রাজনীতিবিদ বার্গে রিসকালিয়েভ—যিনি যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছিলেন।
‘গোপন গুপ্তচর ঘাঁটি’ ও প্রযুক্তি
গুপ্তচর চক্রের প্রধান অর্লিন রুসেভের (৪৭) নেতৃত্বে তারা কাজ করছিলেন। তার গ্রেট ইয়ারমাউথের একটি গেস্টহাউস থেকে গুপ্তচরবৃত্তি চালানো হত। পুলিশ সেখানে গোপন ক্যামেরা, লুকানো রেকর্ডিং ডিভাইস, ড্রোন, ওয়াই-ফাই গুপ্তচর সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।
যেভাবে তারা কাজ করতেন
গুপ্তচর দলের সদস্যরা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন এবং বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত ছিলেন:
- গ্যাবেরোভা ছিলেন বিউটিশিয়ান, ইভানচেভ ছিলেন চিত্রশিল্পী, ইভানোভা ও দঝাম্বাজভ ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী।
- স্টোয়ানোভ একজন এমএমএ যোদ্ধা ছিলেন এবং তার ডাকনাম ছিল “দ্য ডেস্ট্রয়ার”।
রাশিয়ার সরাসরি সম্পৃক্ততা
এই চক্রের নেপথ্যে ছিলেন অস্ট্রিয়ান নাগরিক ইয়ান মার্সালেক, যিনি রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে সরাসরি সংযুক্ত ছিলেন। রুসেভ প্রথমে মার্সালেকের মাধ্যমে গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ পান, পরে তিনি অন্যান্য বুলগেরিয়ানদের এই নেটওয়ার্কে যুক্ত করেন।
প্রধান অপারেশনগুলো
👉 ক্রিস্টো গ্রোজেভকে অনুসরণ ও হত্যার পরিকল্পনা: তাকে প্লেনে নজরদারি, ল্যাপটপ ও ফোন চুরি, বাড়িতে আগুন লাগানো, অপহরণ বা মস্কোতে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
👉 রোমান ডোব্রোখতোভকে অপহরণের পরিকল্পনা: তাকে ইউরোপজুড়ে অনুসরণ করা হয়, যুক্তরাজ্যে ছোট নৌকায় করে অপহরণের পরিকল্পনা করা হয়।
👉 কাজাখস্তানের সাবেক রাজনীতিবিদ বার্গে রিসকালিয়েভকে টার্গেট: রাশিয়ার সঙ্গে কাজাখস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য তাকে টার্গেট করা হয়।
👉 লন্ডনের কাজাখস্তান দূতাবাসে বিশৃঙ্খলা: ভুয়া প্রতিবাদ সংগঠিত করে কাজাখ গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য বিক্রি করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
👉 জার্মানির মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে নজরদারি: ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণের তথ্য সংগ্রহের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
👉 রুশ কর্মকর্তা কিরিল কাচুরকে টার্গেট: তিনি ২০২১ সালে রাশিয়া ছেড়েছিলেন এবং পরবর্তীতে ‘বিদেশি এজেন্ট’ হিসেবে ঘোষিত হন।
রায় ও শাস্তি
বিচারে ইভানোভা, গ্যাবেরোভা ও ইভানচেভ দোষী সাব্যস্ত হন। ইভানোভার বিরুদ্ধে ভুয়া পরিচয়পত্র রাখারও অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এর আগে, রুসেভ, দঝাম্বাজভ ও স্টোয়ানোভ স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন।
বিচারকরা বলেছেন, এই গুপ্তচরবৃত্তি যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।