মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা মুহূর্তে মুহূর্তে বাড়ছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী: সর্বশেষ আপডেট
- ইরান “ট্রু প্রমিস ৩” নামে ইসরায়েলের ওপর পূর্ণমাত্রার বিমান হামলা চালিয়েছে। এই হামলা ছিল ইসরায়েলের আগের আক্রমণের পাল্টা জবাব।
- ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) জানিয়েছে, তারা ডজনখানেক সামরিক ঘাঁটি ও বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে।
- জেরুজালেম ও তেলআভিভের আকাশে উজ্জ্বল বিস্ফোরণের ঝলকানি দেখা গেছে, ইসরায়েলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্রিয় হয়।
- তেলআভিভে কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং অন্তত পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে দেশটির অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস।
- ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন: “ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করেছে, আমরা ভয়াবহ প্রতিশোধ নেব।”
- ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন:“আমাদের লড়াই ইরানি জনগণের সঙ্গে নয়, বরং দেশটির নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। আরও কিছু আসছে। ওরা এখনো বুঝতে পারেনি, কী আঘাত পেয়ে বসে আছে।”
এই সংঘাত আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। পরবর্তী পদক্ষেপ ও প্রতিক্রিয়ার জন্য সবাই এখন তাকিয়ে আছে তেহরান ও তেলআভিভের দিকে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের সঙ্কেত: ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের ভয়াবহ রূপমধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বহুদিনের স্নায়ুযুদ্ধ আজ যেন একেবারে নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিগত কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। দুই দেশের মধ্যে মুখোমুখি সামরিক সংঘর্ষের আশঙ্কা যেমন প্রকট হয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
ইসরায়েলের হামলার পাল্টা জবাব দিল ইরান
ইসরায়েলের “অপারেশন রাইজিং লায়ন” নামের সামরিক অভিযানের পাল্টা জবাবে এবার সরাসরি আকাশপথে ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে ইরান। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে “ট্রু প্রমিস ৩”। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) দাবি করেছে, তারা ডজনখানেক সামরিক ঘাঁটি, এয়ারবেস ও কৌশলগত স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। রাতের আকাশে জেরুজালেম ও তেলআভিভের ওপর বিস্ফোরণের আলোর ঝলকানি দেখা গেছে। ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ব্যস্ত ছিল।
তেলআভিভে বিস্ফোরণ, আহত অন্তত পাঁচজন
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, তেলআভিভে কয়েকটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় অ্যাম্বুলেন্স সংস্থা। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজধানীজুড়ে জরুরি সেবা মোতায়েন করা হয়েছে।
খামেনির হুঁশিয়ারি: “ভয়াবহ প্রতিশোধ আসছে”
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এক সরাসরি বার্তায় বলেন,
“ইসরায়েল আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমরা এর জবাবে ভয়াবহ আঘাত হানব। আমাদের প্রতিশোধ হবে এমন, যা শত্রুপক্ষ কল্পনাও করতে পারবে না।”
এই ঘোষণার পরই ইরানের অভ্যন্তরে সর্বোচ্চ সামরিক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়।
নেতানিয়াহুর পাল্টা বক্তব্য: “আরও বড় কিছু আসছে”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন,
“আমাদের লড়াই ইরানির জনগণের বিরুদ্ধে নয়, বরং তাদের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। আরও আঘাত আসছে। ইরানি শাসকগোষ্ঠী এখনো বুঝতেই পারেনি, কী আঘাত তাদের ওপর নেমে এসেছে বা সামনে আসছে। তারা আগে কখনো এতটা দুর্বল অবস্থায় ছিল না।”
এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, ইসরায়েল এই সংঘর্ষকে একবার শুরু করে থামিয়ে রাখার পক্ষে নয়।
নিহত ও ধ্বংসস্তূপ: আগের হামলায় ইরান হারিয়েছে শীর্ষ নেতৃত্ব
ইসরায়েলের প্রথম দফার আক্রমণে নিহত হয়েছেন ইরানের বহু উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী। এর মধ্যে রয়েছেন:
- মোহাম্মদ বাঘেরি – ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান
- হোসেইন সালামি – IRGC প্রধান
- আমির আলি হাজিজাদেহ – ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটের কমান্ডার
- ফেরেইদুন আব্বাসি – পরমাণু সংস্থার সাবেক প্রধান
- আরও ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানী
এই ধাক্কা ইরানের সামরিক ও পরমাণু কর্মসূচিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: উত্তেজনার আতঙ্কে বিশ্ব
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই হামলায় জড়িত নয়। তবে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা তাদের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে জরুরি সতর্কাবস্থাজারি করা হয়েছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন এবং রাশিয়া—সব পক্ষই শান্তির আহ্বান জানিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন শুধু ‘আহ্বান’ যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন বাস্তব কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত তেহরান ও তেলআভিভের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। ইসরায়েল যদি আরেক দফা বড় হামলা চালায় বা ইরান প্রতিশোধে ব্যাপক পাল্টা আঘাত হানে, তবে তা সরাসরি একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নিতে পারে। এই যুদ্ধ শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, সমগ্র বিশ্ব রাজনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
এই যুদ্ধ আর নিছক সীমান্ত সংঘর্ষ নয়, এটা পরমাণু কর্মসূচি, আঞ্চলিক প্রভাব এবং রাজনৈতিক প্রাধান্য নিয়ে সরাসরি মুখোমুখি অবস্থান। সময়ই বলে দেবে, এর শেষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।