প্রয়াগরাজে বাড়ি ভাঙার ঘটনাকে ‘অসাংবিধানিক’ ও ‘অমানবিক’ বলে কড়া সমালোচনা করল সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার শীর্ষ আদালত উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যেককে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বাড়ি ভাঙার প্রক্রিয়া ‘অবৈধ’ বলে দাবি করে ভুক্তভোগীরা প্রথমে ইলাহাবাদ হাই কোর্চের দ্বারস্থ হন। যদিও সেখানে তাঁদের আবেদন খারিজ হয়। তার পরই মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। বিচারপতি ভূঞার বেঞ্চ সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপের সমালোচনা করে। প্রশ্ন তোলে, প্রশাসনের নোটিস পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়েও। বিচারপতি ওকা বলেন, ‘‘বাড়ি ভাঙার ফলে মামলাকারীরা তাঁদের মাথার উপর ছাদ হারিয়েছেন। তাঁদের যা ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করতে প্রত্যেককে ১০ লক্ষ টাকা করে দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, কর্তৃপক্ষের উচিত সর্বদা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা।’
কি ঘটেছিল?
প্রয়াগরাজ প্রশাসন ভুল করে কয়েকজনের বাড়িকে গ্যাংস্টার আতিক আহমেদের সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তা বুলডোজ়ার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ছিলেন এক আইনজীবী ও অধ্যাপক। অভিযোগ, বাড়ি ভাঙার একদিন আগে মাত্র নোটিস পাঠানো হয়, যা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার লঙ্ঘন।
বিতর্কের সূত্রপাত প্রয়াগরাজ প্রশাসনের একটি পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে। সেখানকার একটি জমিতে চার-পাঁচ জনের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছেন এক জন আইনজীবী এবং অধ্যাপকও। অভিযোগ, যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করেই তাঁদের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। কেন তাঁদের বাড়ি ভাঙা হয়েছিল? তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মামলাকারীদের আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলদের বাড়ি যে জমিতে ছিল, প্রশাসন তা ভুল করে নিহত গ্যাংস্টার আতিক আহমেদের বলে চিহ্নিত করেছিল। তার পরই ওই বাড়িগুলি বুলডোজ়ার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এমনকি, বাড়ি ভাঙার কথা তাঁর মক্কেলদের জানানো হয় মাত্র এক দিন আগে।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ
বিচারপতি এএস ওকা ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঞার বেঞ্চ জানিয়েছে—
- বাড়ি ভাঙার ঘটনায় মানবিকতা ও আইনি সংবেদনশীলতার অভাব স্পষ্ট।
- ভবিষ্যতে বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
- সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রত্যেক নাগরিকের বাসস্থানের অধিকার রয়েছে।
উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে আদালতে দাবি করা হয়েছিল, বাড়িগুলি বেআইনি নির্মাণ ছিল। তবে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের যুক্তি খারিজ করে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না।
এই রায়ের ফলে উত্তরপ্রদেশ সরকারের বুলডোজ়ার নীতি ফের প্রশ্নের মুখে পড়েছে।