গুজরাত রাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে “বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী” অভিযানের নামে বহু মানুষকে আটক করা হয়েছে। তবে ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, যাদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই ভারতীয় নাগরিক এবং মূলত মুসলিম ধর্মাবলম্বী।
ব্যাপক ধরপাকড়, প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়া
গুজরাত পুলিশের ‘অবৈধ বাংলাদেশি শনাক্তকরণ অভিযান’-এর আওতায় বিশেষ করে আহমেদাবাদ, সুরাট ও ভদোদরা শহরে অভিযান চালানো হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তারা “অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের” ধরছে, যাঁরা বেআইনিভাবে বসবাস করছেন এবং অনেকেই জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে চাকরি বা ব্যবসা চালাচ্ছেন।
কিন্তু অধিকারকর্মী ও স্থানীয় সমাজকর্মীদের অভিযোগ— এই অভিযানে যাচাই-বাছাই ছাড়াই বহু ভারতীয় মুসলমানকে শুধু ভাষাগত বা আচারগত কারণে বাংলাদেশি বলে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অনেকের ভোটার আইডি, আধার কার্ড, এমনকি জমির দলিল থাকার পরও তাদের পরিচয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
যেভাবে ‘বাংলাদেশি’ তকমা লাগানো হচ্ছে
ধরা পড়া ব্যক্তিদের অনেকেই বাংলা ভাষায় কথা বলেন, যেটিকে গুজরাতে বাংলাদেশি হবার প্রধান প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম বা ত্রিপুরার বহু নাগরিকও বাংলায় কথা বলেন। অনেক ক্ষেত্রেই এই ভাষাগত পরিচয়কেই ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয় উপেক্ষা করা হচ্ছে।
গুজরাতে কাজের সন্ধানে বহু দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গিয়ে বসবাস করছেন। নির্মাণ শ্রমিক, মৎস্যজীবী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ বিভিন্ন পেশায় তাঁরা নিযুক্ত। প্রশাসনের অভিযোগ, এদের মধ্যে অনেকেই ‘বাংলাদেশি’, অথচ প্রমাণ হিসেবে কেবল ভাষা ও পোশাককে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
আইনি বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু ভাষা বা অঞ্চলভিত্তিক চেহারা দেখে কাউকে অনুপ্রবেশকারী বলা সংবিধান পরিপন্থী। ভারতের নাগরিক আইনে, কোনো ব্যক্তিকে অবৈধ বলে ঘোষণার আগে উপযুক্ত তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হয়। অথচ এই অভিযানে অনেককে গ্রেপ্তার করে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা দিয়ে বন্দি করা হয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, এমন নির্বিচার ধরপাকড় মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন।
রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ করছে, নির্বাচন বা রাজনৈতিক লাভের জন্য মুসলিমদের টার্গেট করে “বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী” ইস্যু উসকে দেওয়া হচ্ছে। বহু মানুষকে ‘দেশদ্রোহী’ বা ‘বহিরাগত’ বলে দাগিয়ে দিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে, যার ফলে প্রকৃত ভারতীয় মুসলমানরাও নিজ দেশে নিজস্ব পরিচয় প্রমাণে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
উপসংহার
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক অভিযানের পেছনে যে বাস্তবতা রয়েছে, তা গভীর উদ্বেগের বিষয়। একজন নাগরিকের পরিচয় যাচাই একটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব, তবে তা যেন হয় ন্যায়সঙ্গত ও মানবাধিকারের আলোকে। শুধু ধর্ম বা ভাষার ভিত্তিতে কাউকে ‘অবৈধ’ তকমা দেওয়া যেমন সাংবিধানিক অধিকার হরণের শামিল, তেমনি এটি ভারতীয় সমাজে বিভাজনের বীজও বপন করতে পারে।
আপনি কি চান, আমি এই ঘটনার সাথে সম্পর্কিত একটি পরিসংখ্যানভিত্তিক প্রতিবেদন বা তুলনামূলক বিশ্লেষণ তৈরি করি?