ভারতের বিতর্কিত ওয়াকফ আইন নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে, তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন—এই আইন তার রাজ্যে জারি হবে না। সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, “বাংলায় এই আইন আমরা মানি না, এ আইন এখানে কার্যকরও হবে না। তা হলে হিংসা কেন? যারা হিংসায় উসকানি দিচ্ছে, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না।”
তিনি আরও বলেন, এই আইন রাজ্য সরকার করেনি, বরং এটি কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি আইন। ফলে এ বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে তা কেন্দ্রের কাছেই তোলা উচিত বলে মন্তব্য করেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা ব্যানার্জি এসময় ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তোলেন কিছু রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে। তার ভাষায়, “ধর্মের অপব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে কিছু দল। এই প্ররোচনায় কেউ যেন না পড়ে।” তিনি ধর্মকে মানবিকতা, সহানুভূতি ও সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে ব্যাখ্যা করেন এবং শান্তি রক্ষায় সবাইকে আহ্বান জানান।
এদিকে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নতুন ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ চলছে। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এই আইন বাতিলের দাবিতে ইতোমধ্যে একাধিক মামলা ভারতের সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়েছে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ আগামী সপ্তাহে এসব মামলার শুনানি করবে।
উত্তরপ্রদেশে এই আইন ঘিরে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক দেখা দিয়েছে। যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার সেখানে হাজার হাজার ওয়াকফ সম্পত্তিকে “বিতর্কিত” হিসেবে চিহ্নিত করে বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ভারতজুড়ে সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে এই রাজ্যেই।
এছাড়া, মুজাফফরনগরে গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে কালো আর্মব্যান্ড পরায় প্রায় তিন শতাধিক মুসলিমকে নোটিশ পাঠানো হয় এবং তাদের প্রত্যেককে ২ লাখ রুপি করে জরিমানা করার নির্দেশ দেয় স্থানীয় প্রশাসন।
এ পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাতেও বিক্ষোভের ঢেউ ছড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার একটি বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে মুসলিম সংগঠন জমিয়ত-ই-উলেমা হিন্দ জানায়, ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবিতে এক কোটি মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তা প্রধানমন্ত্রী দফতরে পাঠানো হবে।
ভারতজুড়ে এই আইন ঘিরে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা শুধু ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক বিষয় নয়—বরং তা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি, সংখ্যালঘু অধিকারের প্রশ্ন এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে একটি বৃহত্তর বিতর্কে পরিণত হয়েছে।