আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) কর্তৃক যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিমানকে আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ায় প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে ফ্রান্স সরকার। গত দুই মাসে এটি ছিল তৃতীয়বারের মতো ফ্রান্সের আকাশ ব্যবহার করল নেতানিয়াহুর বিমান।
সম্প্রতি হাঙ্গেরি থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী ফ্লাইটে ক্রোয়েশিয়া, ইতালি ও ফ্রান্সের আকাশসীমা অতিক্রম করেছে নেতানিয়াহুর বিমান। এর আগেও ফেব্রুয়ারিতে একই রুট ব্যবহার করে একটি ফ্লাইট যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিল এবং ফিরে এসেছিল। ফরাসি কূটনৈতিক সূত্র দাবি করেছে, এসব ফ্লাইট আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অনুমোদন পেয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক।
‘জুরদি’ নামের ফরাসি আইনজীবীদের একটি সংগঠন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছে, অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীর বিমানকে আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে ফ্রান্স একটি গুরুতর আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। তাদের যুক্তি, ১৯৪৪ সালের শিকাগো কনভেনশন অনুযায়ী প্রতিটি দেশের আকাশসীমা তার নিজস্ব সার্বভৌম সীমানার অংশ এবং সেক্ষেত্রে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রবেশ করলে তাকে গ্রেপ্তারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ফ্রান্স, ইতালি ও ক্রোয়েশিয়া—তিনটি দেশই রোম স্ট্যাটিউটের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিসি ওয়ারেন্ট থাকা ব্যক্তিকে আটক করা তাদের আন্তর্জাতিক দায়িত্ব।
এ নিয়ে ফরাসি সংসদ সদস্যরাও প্রশ্ন তুলেছেন। ‘লা ফ্রঁস ইনসুমিস’ দলের সংসদ সদস্য ম্যাথিল্ড পানো জানতে চেয়েছেন, ৬ এপ্রিলের ফ্লাইট কি অনুমোদিত ছিল। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “এই অনুমতি রোম স্ট্যাটিউটের এক মারাত্মক লঙ্ঘন।” অন্য সংসদ সদস্য ক্লেমঁস গেত নেতানিয়াহুর ফ্লাইটপাথের একটি চিত্র পোস্ট করে বলেন, “তাকে থামানো ও গ্রেফতার করা উচিত ছিল। এক অভিযুক্তকে রক্ষা করে ফ্রান্স অপরাধে সহায়তা করেছে।”
ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত সপ্তাহে নেতানিয়াহুর বিমান প্রায় ৪০০ কিলোমিটার পথ বাড়িয়ে এমনভাবে রুট নির্ধারণ করেছিল, যেন কোনোভাবেই আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর হতে পারে এমন দেশে জরুরি অবতরণ করতে না হয়। ইসরাইলি কূটনীতিক ইয়েচিয়েল লেইটার জানিয়েছেন, ফ্লাইটটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটির ওপর দিয়েই উড়েছে, যাতে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। স্বাভাবিকভাবে ১২ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লেগেছে ১৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
এদিকে, ফ্রান্স এর আগেও নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার না করার ইঙ্গিত দিয়েছিল, দাবি করে যে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি ‘ইমিউনিটি’ ভোগ করেন। তবে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, আইসিসির পরোয়ানা জারি হলে সেই ইমিউনিটি কার্যকর হয় না।
উল্লেখ্য, নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্টের বিরুদ্ধে গাজার সাধারণ মানুষকে পরিকল্পিতভাবে ক্ষুধার্ত রাখা, বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, অসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা এবং গণহত্যাসহ একাধিক অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি।
তা সত্ত্বেও ইউরোপের একাধিক দেশ আকাশসীমা ব্যবহার করতে দিয়ে কার্যত এই অভিযুক্ত নেতাকে রক্ষা করে চলেছে—এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা।