আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার এক বিশেষ আদেশে বলেছিলেন যে, তিনি বিদেশী দেশের কাছ থেকে আমেরিকান পণ্যগুলিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নতুন পাল্টাপাল্টি শুল্ক বা Reciprocal Tariffs পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করছেন। এই পদক্ষেপটি আমেরিকার আয় বৃদ্ধি করতে সহায়ক হতে পারে, তবে তা একই সাথে বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে এবং আমেরিকার উচ্চতর মুদ্রাস্ফীতির সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য মন্ত্রী প্রার্থী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, তিনি আশা করছেন যে এ বিষয়ে তদন্ত কাজ এপ্রিল ১-এর মধ্যে সম্পন্ন হবে। এরপর ২ এপ্রিল থেকে ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নিবেন, কখন এবং কোন শুল্কগুলো কার্যকর হবে।
এই পাল্টাপাল্টি শুল্ক ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, যেখানে তিনি বলেছেন যে, বিদেশী দেশগুলি যখন আমেরিকান পণ্যগুলিতে শুল্ক আরোপ করে, তখন আমেরিকা তাদের উপর একই পরিমাণ শুল্ক আরোপ করবে।
“যখন তারা আমাদের উপর শুল্ক আরোপ করবে, আমরা তাদের উপরও ঠিক একই শুল্ক আরোপ করব,” বলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আমেরিকান পণ্যগুলির বাজারে আরও সাশ্রয়ী দাম নিশ্চিত করা হবে, বিশেষ করে যখন অনেক দেশ নিজেদের বাজারে আমেরিকান পণ্য বন্ধ করে রাখে।
এই ঘোষণাটি আসে যখন ট্রাম্প ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বৈঠক করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ট্রাম্প বিশেষভাবে ভারতকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, “তারা অন্য যে কোন দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করে।”
বিশ্ব বাণিজ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্কের সম্ভাব্য প্রভাব
পাল্টাপাল্টি শুল্কের ধারণা বিশ্ব বাণিজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশই এখন আমেরিকান পণ্যগুলিতে বেশি শুল্ক আরোপ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ভারত আমেরিকান মোটরসাইকেলগুলিতে ১০০% শুল্ক আরোপ করে, কিন্তু আমেরিকা ভারতীয় মোটরসাইকেলগুলিতে মাত্র ২.৪% শুল্ক আরোপ করে।
ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল, “আপনি যদি এখানে তৈরি করেন, তাহলে কোন শুল্ক আরোপ করা হবে না।” এটি মানে, যদি ভারত তাদের উৎপাদন আমেরিকায় নিয়ে আসে, তবে তারা নতুন শুল্ক থেকে মুক্ত থাকবে।
বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদাররা কি প্রভাবিত হবে?
শুল্ক নতুন করে আরোপ করা হলে, আমেরিকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলো যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারত, তার প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভব করতে পারে। ইউরোপের দেশগুলো যেমন জার্মানি, আয়ারল্যান্ড এবং ইতালি, যাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য আমেরিকায় যেমন মেডিকেল যন্ত্রপাতি, গাড়ি এবং ফার্মাসিউটিক্যালস, এসব পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ভারত আমেরিকা থেকে যে পণ্যগুলো আমদানি করে তার উপর শুল্কের হার ছিল ৯.৫%, যেখানে আমেরিকা ভারতীয় পণ্যগুলিতে ৩% শুল্ক আরোপ করেছে।
এছাড়া, দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের উপরও এই শুল্ক বৃদ্ধি তাদের বাণিজ্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। যেমন, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, এবং অন্যান্য দেশের আমেরিকার শুল্কের হার এখনো তুলনামূলকভাবে কম, তবে পাল্টাপাল্টি শুল্কের কারণে তারা বৃহত্তর প্রভাবিত হতে পারে।
অর্থনীতি এবং মুদ্রাস্ফীতি: নতুন শুল্কের প্রভাব
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুল্ক আরোপের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, এটি আমেরিকার বৃহত্তর বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সাহায্য করবে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলেন, শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য দ্রব্যমূল্য বেড়ে যেতে পারে, যা মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে সাহায্য করবে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে আমেরিকানরা এসব শুল্কের বোঝা বহন করবে, তাদের জন্য এটি একটি বড় চাপ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
“মূল্য কিছুটা বাড়তে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে মূল্য কমে যাবে,” বলেছেন ট্রাম্প। কিন্তু তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমেরিকানদের কিছুটা ক্ষতি সইতে হবে।” তবে, এই পদক্ষেপের কারণে আমেরিকান ভোক্তা সাধারণ কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন, বিশেষ করে যদি তারা বিকল্প সস্তা পণ্য খুঁজে না পান।
বিশ্ববাজারে শুল্ক আরোপের সমালোচনা
বিশ্ববাজারে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের পদক্ষেপগুলি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির ফলে অন্যান্য দেশও প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করতে পারে, যার ফলে বিশ্ব বাণিজ্য আরো অস্থির হতে পারে। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে এটি একটি নতুন বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা হতে পারে, যা গ্লোবাল অর্থনীতির জন্য একটি বড় ঝুঁকি।