দক্ষিণ ক্যারোলিনায় প্রথমবারের মতো আধুনিক ইতিহাসে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এই মৃত্যুদণ্ডটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রে ২০১০ সালের পর প্রথম ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যু, এবং এটি দক্ষিণ ক্যারোলিনার ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। ৬৭ বছর বয়সী ব্র্যাড কিথ সিগমনকে তার এক্স-গার্লফ্রেন্ডের বাবা-মাকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
২০০১ সালে, সিগমন গ্লাডিস এবং ডেভিড লার্ক নামক তার এক্স-গার্লফ্রেন্ডের বাবা-মাকে Baseball bat দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। তিনি সবসময়ই তাঁর অপরাধ মেনে নিয়েছেন এবং আদালতে নিজের অপরাধের দায় স্বীকার করেছিলেন। তার হত্যাকাণ্ডে গ্লাডিস ও ডেভিডের মৃত্যু হয় একটি ছোট শহরের বাড়িতে, যেখানে তারা বসবাস করতেন। সিগমন তার শেষ সময়ে ফায়ারিং স্কোয়াডের পদ্ধতিকে বেছে নেন, কারণ তিনি লিথাল ইনজেকশন এবং বৈদ্যুতিক চেয়ারকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলেন।
ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য দক্ষিণ ক্যারোলিনা সংশোধন বিভাগের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট নিয়মাবলি প্রকাশ করা হয়েছিল। সিগমনকে একটি বিশেষভাবে প্রস্তুত চেয়ার দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল, তার মাথায় একটি হুড ছিল এবং তাঁর হৃদয়ের উপর লক্ষ্যবস্তু স্থাপন করা হয়েছিল। তিনজন স্বেচ্ছাসেবক সংশোধন কর্মী, যারা বন্দীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য নির্বাচিত হন, ১৫ ফুট দূরে একটি প্রাচীরের পিছনে দাঁড়িয়ে সিগমনের দিকে রাইফেল তাক করেন এবং একযোগে গুলি চালান।
ফায়ারিং স্কোয়াডের পদ্ধতি নির্বাচনের কারণ হিসেবে সিগমনের আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন, লিথাল ইনজেকশন ব্যবহার করা যেহেতু অনেক সময় কার্যকর হয় না, এবং বৈদ্যুতিক চেয়ার ব্যবহার অত্যন্ত নিষ্ঠুর এবং প্রাচীন প্রযুক্তি, যা তাকে পুড়িয়ে মারতে পারে।
ব্র্যাড কিথ সিগমনের শেষ কথা
সিগমন মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে শেষ কথায় চারটি বাইবেলের উদ্ধৃতি উল্লেখ করেন, যা তিনি বলেন যে “নতুন Testament-এ কোথাও ঈশ্বর মানুষকে আরেকজন মানুষকে হত্যা করার অনুমতি দেন না।” তিনি আরও বলেন, “আমি চাই আমার শেষ কথাটি প্রেম এবং সহানুভূতির ভিত্তিতে হোক, এবং আমি সকল খ্রিস্টানদের মৃত্যুদণ্ডের অবসান ঘটানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা এখন ঈশ্বরের করুণায় আছি।”
ভিকটিমের পরিবারের প্রতিক্রিয়া
সিগমনের এক্স-গার্লফ্রেন্ড, রেবেকা আর্মস্ট্রং, ২৪ বছর পর প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের কাছে তার অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি জানান, সিগমনের এই হত্যাকাণ্ড তার পরিবারের জন্য অনেক বড় ক্ষতি সৃষ্টি করেছে, তবে তিনি তার মৃত্যুদণ্ডে একমত নন। আর্মস্ট্রং বলেন, “মৃত্যু কেবল ঈশ্বরের হাতে হওয়া উচিত, মানুষের হাতে নয়।”
ফায়ারিং স্কোয়াডের পদ্ধতির ইতিহাস
ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডের পদ্ধতি আধুনিক যুগে বেশ বিরল হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১০ সালে ইউটাহ রাজ্যে সর্বশেষ ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল। তবে দক্ষিণ ক্যারোলিনা এই পদ্ধতিকে পুনরায় চালু করেছে। দক্ষিণ ক্যারোলিনার সংশোধন বিভাগ দাবি করছে যে, ফায়ারিং স্কোয়াড একটি নিরাপদ এবং কার্যকর পদ্ধতি, যা একাধিক বাধা সত্ত্বেও কার্যকরভাবে মৃত্যুদণ্ড দিতে সক্ষম।
এই মৃত্যুদণ্ডের পদ্ধতি ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে এটি রাজনীতিক, মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজ্ঞদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই নতুন পদ্ধতিটি কি মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্নে এক নতুন রূপ নিয়ে আসবে? অথবা এটি যুক্তরাষ্ট্রের শাস্তির ব্যবস্থায় এক পুনঃপ্রচলিত নিষ্ঠুর দৃষ্টিকোণকে তুলে ধরবে?
দক্ষিণ ক্যারোলিনায় ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা দেশের আইনব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। সিগমনের মৃত্যুদণ্ড এই প্রশ্নগুলো সামনে নিয়ে এসেছে: সত্যিই কি এই ধরনের শাস্তি মানবাধিকার রক্ষায় সহায়ক হতে পারে? অথবা এটি শুধুমাত্র শাস্তির প্রতি সমাজের নিষ্ঠুর মনোভাবকে প্রমাণ করে?
এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও শাস্তির পদ্ধতি এবং মৃত্যুদণ্ড নিয়ে বিশ্বব্যাপী নতুন আলোচনা শুরু করেছে, যা আরও বিস্তৃত এবং গভীর আলোচনা এবং পরিবর্তন আনার আহ্বান করছে।