যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রযুক্তি জগতের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ইলন মাস্কের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। তবে সাম্প্রতিক ঘটনায় সেই সম্পর্ক এখন কার্যত ভেঙে পড়েছে।
এক সাক্ষাৎকারে এনবিসি নিউজকে ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি, হ্যাঁ,” যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি কি মনে করেন যে মাস্কের সঙ্গে তার সম্পর্ক এখন শেষ। পরবর্তীতে যখন তাকে প্রশ্ন করা হয় তিনি কি সম্পর্ক মেরামত করতে চান, তখন তিনি সোজাসুজি উত্তর দেন: “না”। তার ভাষায়, “সে প্রেসিডেন্টের অফিসের প্রতি অসম্মান দেখিয়েছে। এটা খুবই খারাপ বিষয়।”
উদ্ভব কাহিনী:এই সংঘাত শুরু হয় যখন মাস্ক ট্রাম্পের নতুন বাজেট বিল – যা তিনি ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ নামে অভিহিত করেছিলেন – তা সোশ্যাল মিডিয়ায় কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন। মাস্ক বলেন, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটে ট্রিলিয়ন ডলার ঘাটতি তৈরি করবে এবং সরকারি খরচ কমানোর তার আগের কাজগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
মাস্ক, যিনি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে প্রায় $২৫০ মিলিয়ন অনুদান দিয়েছিলেন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে “ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি” বা DOGE-এর প্রধান হিসেবে ১২৯ দিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন, এই বিলকে আখ্যা দেন “একটি জঘন্য বিকৃতি”।
সোশ্যাল মিডিয়ার যুদ্ধ:ডগে পদত্যাগের পর মাস্ক নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X-এ লেখেন, বিলটি “একটি অর্থনৈতিক আত্মঘাত”। তবে তিনি তখনো সরাসরি ট্রাম্পের নাম নেননি। কিন্তু যখন ট্রাম্প পরে সাংবাদিকদের বলেন তিনি “মাস্কের আচরণে হতাশ”, তখন মাস্ক পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “ট্রাম্প আমার ছাড়া জিততেই পারতেন না।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে ট্রাম্প “এপস্টেইন ফাইলস”-এ জড়িত, যদিও পরবর্তীতে সেই পোস্ট মুছে দেন এবং এপস্টেইনের আইনজীবীরা অভিযোগ অস্বীকার করে।
ট্রাম্প এরপর তার প্ল্যাটফর্ম Truth Social-এ মাস্ককে “পাগল” বলে আখ্যা দেন এবং হুমকি দেন যে ফেডারেল সরকারের সঙ্গে মাস্কের সব চুক্তি বাতিল করা হতে পারে।
রাজনৈতিক ফলাফল:এই বিবাদের মধ্যে রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স বলেন, “এলন মাস্ক খুব বড় ভুল করেছেন। তিনি ট্রাম্পকে আক্রমণ করে দলে ফেরার সম্ভাবনা নষ্ট করেছেন।”
মাস্কের হুমকি ছিল আরও বড়। তিনি বলেন, তিনি ভবিষ্যতের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পের সমর্থকদের বিরোধীদের সমর্থন করতে পারেন, এমনকি ডেমোক্র্যাটদেরও।
রাজনৈতিক বাস্তবতা ও ভবিষ্যত:বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মাস্কের এই অবস্থান ট্রাম্পের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। তিনি “দ্য আমেরিকা পার্টি” নামে নতুন একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরিকল্পনাও করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। একদিকে ট্রাম্প তাঁর ওপর রেগে আছেন, অন্যদিকে মাস্কও দৃঢ় অবস্থানে থেকে ভবিষ্যতে আরও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
এই দ্বন্দ্ব শুধু দুই ব্যক্তির মধ্যকার সম্পর্কের অবনতিই নয়, বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত রাজনীতিতে প্রযুক্তি ও পুঁজির প্রভাব কেমন হবে, সেই প্রশ্নও সামনে এনেছে। ইলন মাস্কের মতো একজন বিত্তশালী উদ্যোক্তার সঙ্গে ট্রাম্পের মত একজন প্রভাবশালী রাজনীতিকের সংঘর্ষ এখন পুরো দেশজুড়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষণের কেন্দ্রে।