সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাজ্যের লেবার নেতা স্যার কির স্টারমার এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে আক্রমণ করেছেন, মন্তব্য করেছেন যে তারা ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ শেষ করতে “কিছুই করেননি”। তার এই মন্তব্য আসে স্টারমার এবং ম্যাক্রোঁর ওয়াশিংটন সফরের আগে, যেখানে তারা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে বৈঠক করবেন।
স্টারমার এবং ম্যাক্রোঁর সমালোচনা
ট্রাম্প তার মন্তব্যে বর্তমান পশ্চিমা নেতৃত্বের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেন এবং বলেন যে, স্টারমার এবং ম্যাক্রোঁ ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে নানা পদক্ষেপ নিলেও, তাদের মতানুযায়ী, তারা যুদ্ধের মূল কারণগুলো সমাধান করতে যথেষ্ট কিছু করেননি এবং একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেননি।
“স্টারমার এবং ম্যাক্রোঁ শুধু কথা বলছেন। তারা যুদ্ধ থামাতে কিছুই করেননি। তারা বসে থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে দেখছেন,” ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে বলেন। “এখন সময় এসেছে বাস্তব নেতৃত্বের, এবং আমার কাছে অভিজ্ঞতা আছে যা আমি এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে কাজে লাগাতে পারি।”
স্টারমার এবং ম্যাক্রোঁর ওয়াশিংটন সফর
স্টারমার এবং ম্যাক্রোঁ দুজনই শিগগিরই ওয়াশিংটন সফরে যাবেন, যেখানে তারা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে ইউক্রেনের চলমান সংঘাত এবং বৃহত্তর ইউরোপীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত আলোচনা করবেন। এই আলোচনাগুলি সম্ভবত ইউক্রেনকে সহায়তা, সামরিক সাহায্য, এবং শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি অর্জনের বিষয় নিয়ে হবে।
ট্রাম্পের মন্তব্য এই সময়কার পশ্চিমা নীতির সমালোচনার অংশ হিসেবে এসেছে, যেখানে তিনি পূর্বে উল্লেখ করেছেন যে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত সমাধানে একটি ভিন্ন বিদেশনীতি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। তার মতে, পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়ে আসছে, তা আসলে খুব কম ফলপ্রসূ।
ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে ন্যাটো এবং ইউরোপীয় সংঘের প্রতি সমালোচনা করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে ইউরোপীয় যুদ্ধগুলোর ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খুব বেশি সম্পৃক্ততা থাকা উচিত নয়। তিনি তার পুনরায় প্রেসিডেন্ট হলে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করার পরিকল্পনা করেছেন এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে এটি ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত সমাধান আনতে সাহায্য করবে।
ট্রাম্পের মন্তব্য কিছু নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, অনেকেই তার নির্জননীতি পছন্দ করেছেন, তবে অন্যরা দাবি করেছেন যে তার দৃষ্টিভঙ্গি আন্তর্জাতিক ঐক্যকে দুর্বল করতে পারে, যা ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমাদের সমর্থন কমিয়ে ফেলতে পারে। সমালোচকরা বলছেন যে পুতিনের সাথে আলোচনায় বসার তার আগ্রহ অনেককেই আপোষমূলক মনে হতে পারে।
ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে, স্টারমারের লেবার পার্টি এবং ম্যাক্রোঁর অফিস তাদের অবস্থান রক্ষা করেছেন, জানিয়ে দেন যে তারা ইউক্রেনকে সহায়তা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
স্টারমারের মুখপাত্র বলেন, “কির স্টারমার এবং লেবার পার্টি সবসময় পুতিনের আক্রমণের বিরুদ্ধে শক্ত এবং ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছে। আমরা ইউক্রেনের প্রতি আমাদের অটুট সমর্থন দেখিয়েছি এবং আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি যাতে ইউক্রেন নিজেকে রক্ষা করতে পারুক।”
ম্যাক্রোঁর অফিসও একটি বিবৃতি প্রদান করেছে, যেখানে তারা ইউক্রেনকে সাহায্য করতে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রতিষ্ঠা করতে ফ্রান্সের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। “প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ইউরোপের শান্তির প্রচেষ্টায় সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছেন এবং ইউক্রেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করেছেন,” বিবৃতিতে বলা হয়।
যতদিন ইউক্রেনের যুদ্ধ চলতে থাকবে, ততদিন বিশ্ব নেতাদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে। স্টারমার এবং ম্যাক্রোঁর ওয়াশিংটন সফর ভবিষ্যত পররাষ্ট্রনীতি এবং ইউক্রেনকে দেওয়া সহায়তার পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
ট্রাম্পের মন্তব্য, যা পশ্চিমা নীতির প্রতি তার সমালোচনার অংশ, সেই সাথে আগামী সপ্তাহগুলিতে এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং আলোচনার পদ্ধতি কীভাবে পরিবর্তিত হয়, তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।