প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সম্পর্কের উত্তেজনা সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রাম্প জেলেনস্কিকে “নির্বাচনবিহীন স্বৈরশাসক” আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন, যা বিশ্বের রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে।
সম্পর্কের অবনতি
সম্প্রতি, জেলেনস্কি মন্তব্য করেছেন যে ট্রাম্প রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রচারিত ভ্রান্ত তথ্যের প্রভাবাধীন। এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায়, ট্রাম্প জেলেনস্কিকে স্বৈরশাসক বলে অভিহিত করেছেন, দাবি করেছেন যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য অপব্যবহার করছেন। ট্রাম্পের এ ধরনের মন্তব্য ইউক্রেনের পরিস্থিতির প্রতি মার্কিন সমর্থনের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্পের এই আক্রমণ আন্তর্জাতিক মহলে বিশেষভাবে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, কারণ তিনি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার নীতির প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করেছেন এবং ইউক্রেনকে যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে এই পদক্ষেপটি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।
ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব
ট্রাম্প একটি শান্তিচুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন, যা ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে উত্সাহিত করেছে। এ ধরনের প্রস্তাব ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, কারণ তারা মনে করে, এতে রাশিয়া আরও ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে পারে এবং ইউক্রেনের স্বাধীনতা বিপন্ন হতে পারে।
ট্রাম্পের এই রকম শর্তাবলী ইউক্রেনের জন্য মারাত্মক পরিণতির কারণ হতে পারে, কারণ ইউক্রেন রাশিয়ার আক্রমণের মুখে তার ভূমিকা পালন করে আসছে। ইউক্রেনের নেতৃবৃন্দ তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াই করছে, এবং তারা আশঙ্কা করছে যে ট্রাম্পের এমন অবস্থান তাদের পরাজয় নিশ্চিত করতে পারে।
জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের আক্রমণের পর, জেলেনস্কি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পাল্টা মন্তব্য করেছেন। তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রুশ প্রোপাগান্ডার পক্ষে কাজ করার অভিযোগ তুলেছেন এবং ইউক্রেনের ওপর তার অগ্রহণযোগ্য পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন। জেলেনস্কি ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক বৈধতা পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে কোনও সমঝোতা বা আলোচনার বিরোধিতা করেছেন।
মার্কিন রাজনীতি ও ইউরোপীয় প্রতিক্রিয়া
মার্কিন রাজনীতিতে এই বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে। রিপাবলিকান দলের মধ্যে কিছু সদস্য ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, তাদের মতে, ট্রাম্পের কূটনৈতিক পদক্ষেপ দ্রুত যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে সহায়ক হতে পারে। তবে, বহু রাজনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা এই মতামতকে বিপজ্জনক মনে করছেন, কারণ এটি রাশিয়ার বিজয়কে সহানুভূতির লক্ষ্যে পরিণত করতে পারে।
ইউরোপের নেতারা জেলেনস্কির প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন, তাদের মতে, ইউক্রেনের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং যুদ্ধের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ভবিষ্যতের দিকে
এই দ্বন্দ্ব ইউক্রেনের ভবিষ্যত এবং মার্কিন-ইউক্রেন সম্পর্কের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। ইউক্রেনের জন্য, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যেহেতু তাদের কাছে মার্কিন সমর্থন এখনও গুরুত্বপূর্ণ। আগামী মাসগুলিতে এই উত্তেজনা আরো তীব্র হতে পারে, বিশেষত যদি ট্রাম্প ২০২৫ সালে আবার ক্ষমতায় আসেন।
বিশ্বের রাজনীতি এখন অনেকটাই উন্মুক্ত, এবং এই সম্পর্কের তিক্ততা ইউক্রেনের অস্তিত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল তৈরি করতে পারে।