ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি ‘বলদর্পী’ দেশগুলোর সমালোচনা করেছেন, যা স্পষ্টতই ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানকে দেওয়া সামরিক হুমকির প্রতিক্রিয়া বলে মনে করা হচ্ছে।
শুক্রবার (৮ মার্চ) ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, তিনি ইরানকে একটি চিঠি লিখেছেন, যেখানে আলোচনা করতে বলা হয়েছে, অন্যথায় সামরিক হামলার মুখোমুখি হতে হতে পারে।
এর জবাবে শনিবার (৯ মার্চ) এক বক্তৃতায় আয়াতোল্লাহ খামেনি বলেন, ইরান ‘বলদর্পী সরকারগুলোর’ সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করবে না। তিনি বলেন, “তাদের আলোচনার উদ্দেশ্য সমস্যার সমাধান নয়, বরং আধিপত্য বিস্তার।”
জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার (IAEA) মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি দ্রুত এগিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে, ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক উন্নয়ন ঠেকাতে একটি নতুন চুক্তির পক্ষে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, “আমি তাদের (ইরান) একটি চিঠি দিয়েছি, যেখানে বলেছি যে, আমি আশা করি তারা আলোচনায় বসবে। কারণ যদি আমাদের সামরিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হয়, তাহলে তা তাদের জন্য ভয়াবহ হবে।”
খামেনি তার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করেই বলেন, “কিছু বলদর্পী সরকার আলোচনার জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে, তাদের উদ্দেশ্য সমস্যা সমাধান নয়, বরং আমাদের ওপর নতুন শর্ত আরোপ করা।”
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
গত ডিসেম্বর মাসে IAEA প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানান, ইরান ৬০% মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়ে দিয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মাত্রার কাছাকাছি। তবে, ইরান বরাবরই দাবি করেছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
২০১৫ সালে ইরান যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানির সঙ্গে একটি পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, যার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে তারা পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে, ট্রাম্প ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়ে পুনরায় ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার পর থেকে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি আরও ত্বরান্বিত করেছে, যা পশ্চিমা বিশ্বে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের ইউরেনিয়াম মজুদ এখন প্রায় অস্ত্র তৈরির উপযোগী পর্যায়ে পৌঁছেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও সামরিক প্রস্তুতি
মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক যুদ্ধবিগ্রহ ইরান ও পশ্চিমাদের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েল যদি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, তবে তিনি তা সমর্থন করবেন। গত বছর গাজা ও লেবাননের সংঘাতের সূত্র ধরে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। এসব হামলায় ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে যাচ্ছে ইরান। সোমবার ইরানের চাবাহার বন্দরে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান বর্তমানে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে এবং দেশটিতে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইস্যুতে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা গেছে।
(সংবাদ সংক্ষেপ: বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে প্রস্তুত)