মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্যানাডা, মেক্সিকো এবং চীনের ওপর শুল্ক আরোপের পর বিশ্ব বাণিজ্যে অস্থিরতার আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে মার্কিন শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে। ট্রাম্প তার হুমকি অনুযায়ী ক্যানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি সম্পর্কিত ২৫% শুল্ক আরোপ করেছেন এবং চীনের জন্য ২০% শুল্ক নির্ধারণ করেছেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে “খুবই বোকামি” হিসেবে অভিহিত করেছেন। মঙ্গলবার মার্কিন শেয়ারবাজারের প্রধান সূচকগুলোতে বড় ধরনের পতন ঘটেছে, যা দ্বিতীয় দিনের মত অব্যাহত রয়েছে। একইভাবে, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সের শেয়ারবাজারও নিচে নেমেছে।
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পর কানাডা এবং চীন ইতোমধ্যে মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম বলেছেন, তাদের দেশের পাল্টা পদক্ষেপ রবিবার ঘোষণা করা হবে, যা শুল্ক এবং অশুল্ক পদক্ষেপের সমন্বয়ে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) বাণিজ্য মুখপাত্র ওলোফ গিল বলেছেন, “এই শুল্কগুলি আন্তঃসীমান্ত সরবরাহ চেইন, বিনিয়োগ প্রবাহ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।”
ট্রাম্প আরও হুমকি দিয়েছেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) ওপরও ২৫% শুল্ক আরোপ করবেন, যেখানে তিনি দাবি করেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন “যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকাতে” গঠন করা হয়েছিল। ইউরোপ ইতোমধ্যে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত কোন শুল্ক আরোপ করা হয়নি।
সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করেছে যে, তাদের প্রতিবেশী দেশগুলো এবং চীনের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ কার্যকর হবে, এবং তার পর পরই দেশের তিনটি প্রধান শেয়ার সূচক পতন দেখেছে। মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে পতন অব্যাহত থাকে, যখন লন্ডনের FTSE 100 সূচক ১.২% কমে শেষ হয়।
যুক্তরাজ্যের চ্যান্সেলর রেচেল রিভস বলেছেন, “যদিও যুক্তরাজ্যে সরাসরি শুল্ক আরোপ না-ও হতে পারে, তবুও আমরা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ধীরগতির, কম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব অনুভব করব।”
ট্রাম্প আশা করছেন, এই শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করতে প্ররোচিত করা যাবে, যা দেশটির অর্থনীতির বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানে সাহায্য করবে। তবে, বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, শুল্ক আরোপের ফলে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, যা পরবর্তীতে বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, শুল্ক আরোপের কারণে মেক্সিকো এবং কানাডায় অর্থনৈতিক মন্দা হতে পারে, আমেরিকান গৃহস্থালির জন্য দাম বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এর প্রভাব সারা বিশ্বে, বিশেষত যুক্তরাজ্যে, পড়তে পারে।
এদিকে, মার্কিন কোম্পানিগুলো শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। চিপোটলে’র প্রধান নির্বাহী স্কট বোট্রাইট জানিয়েছে, তাদের রেস্টুরেন্ট চেইন আপাতত শুল্কের খরচ শোষণ করবে। তবে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই এই খরচ গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে, যার ফলে মূল্য বৃদ্ধি পাবে।
ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক উদ্বেগ তৈরি করছে, এবং বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন যে, এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।