যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা নতুন মোড় নিয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণার পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনায় বসেন ট্রাম্প।
আলোচনায় মূলত বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়ন, দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ ও নতুন শুল্ক নীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়। তবে দুই দেশের অবস্থানের মধ্যে স্পষ্ট মতপার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। ট্রাম্পের কড়া বাণিজ্যনীতি ও ভারতের প্রতিক্রিয়া বিশ্ব অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
🔹 ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির ঘোষণা
ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে যে, ভারত থেকে আমদানি করা বেশ কিছু পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক বসানো হবে। এর মধ্যে প্রধানত ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, ওষুধ, বস্ত্র ও প্রযুক্তিপণ্য রয়েছে।
ট্রাম্প যুক্তি দিয়েছেন যে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে অনেক বেশি শুল্ক আরোপ করে এবং মার্কিন বাজারকে শোষণ করছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রকেও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি চুক্তি করতে চাই যা আমাদের অর্থনীতির জন্য ন্যায্য হবে। ভারত আমাদের দেশ থেকে প্রচুর পণ্য নিয়ে যায়, কিন্তু আমাদের পণ্যে অনেক বেশি শুল্ক বসায়। এটি আর চলতে পারে না!”
নতুন এই শুল্কের কারণে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে যেতে পারে এবং এতে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
🔹 মোদির প্রতিক্রিয়া ও ভারতের অবস্থান
ট্রাম্পের ঘোষণার পরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেন।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মোদির উদ্যোগেই ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা হয়।
মোদি বলেন, “ভারত সব সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। তবে নতুন শুল্ক নীতি আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আমরা চাই, দুই দেশ মিলে গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাক।”
ভারত মনে করছে, এই শুল্ক নীতি কার্যকর হলে ভারতীয় রপ্তানি শিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে ভারতীয় প্রযুক্তি ও ওষুধ শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ভারতের এক শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসন যদি এই শুল্ক বহাল রাখে, তাহলে ভারতও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।”
🔹 মার্কিন ব্যবসায়ী মহলের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি নিয়ে মার্কিন ব্যবসায়ীরা বিভক্ত অবস্থানে রয়েছেন।
✅ শিল্পপতির একাংশ মনে করছেন— এটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য ভালো, কারণ ভারতীয় পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে এবং দেশীয় পণ্যগুলোর চাহিদা বাড়বে।
❌ অন্যদিকে প্রযুক্তি ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের অনেকেই শঙ্কিত— কারণ ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য যেমন ওষুধ ও সফটওয়্যার সেবার খরচ বেড়ে যেতে পারে, যা মার্কিন স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে এমন বাণিজ্য দ্বন্দ্ব চলতে থাকলে এর প্রভাব শুধু এই দুই দেশেই নয়, বিশ্ব বাণিজ্যে পড়বে।”
🔹 বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ
ট্রাম্প ও মোদির আলোচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা। তবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বড় কোনো বাণিজ্য চুক্তি হলে উভয় দেশই উপকৃত হবে। তবে নতুন শুল্ক নীতি বাস্তবায়িত হলে এই চুক্তির সম্ভাবনা আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
✅ ভারত চায়— যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক হ্রাস করুক এবং রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ দিক।
✅ যুক্তরাষ্ট্র চায়— ভারত মার্কিন পণ্যে কম শুল্ক আরোপ করুক এবং নতুন বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াক।
ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে ভারতের জন্য মার্কিন বাজার সংকুচিত হলে চীন ও ইউরোপের দিকে ঝুঁকতে পারে ভারত। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতি আরও চাপে পড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
🔹 ট্রাম্প-মোদির আলোচনা: উত্তেজনার ইঙ্গিত?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে।
📌 ট্রাম্প প্রশাসন যদি ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বহাল রাখে, তাহলে ভারতও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে।
📌 ভারত যদি শুল্ক বাড়ায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ও কৃষি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
📌 এই উত্তেজনা আরও বাড়লে, ভারত চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তির দিকে ঝুঁকতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী মাসগুলোতে দুই দেশের কূটনৈতিক আলোচনা খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। যদি কোনো সমঝোতা না হয়, তাহলে এটি বিশ্ব বাণিজ্যে আরও অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
🔹 শেষ কথা
ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির কারণে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক এক নতুন সংকটে পড়েছে।
✅ ট্রাম্প যুক্তি দিচ্ছেন, ভারতীয় পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করে মার্কিন অর্থনীতির ক্ষতি করছে।
✅ মোদি পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, এই শুল্ক ভারতের রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং দুই দেশের সম্পর্ককে দুর্বল করতে পারে।
✅ বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এই সমস্যা সমাধান না হয়, তাহলে এটি দুই দেশের বাণিজ্যের পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
এখন দেখার বিষয়, মোদির নেতৃত্বে ভারত এই চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে পারে কিনা!