পাকিস্তানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কড়া বার্তা দিল ভারত। চেনাব নদীর বাগলিহার বাঁধ থেকে পাকিস্তান অভিমুখে পানির প্রবাহ প্রায় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার। একই সঙ্গে, কাশ্মীরের ঝেলাম নদীর উপর নির্মিত কিশানগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকেও পানি প্রবাহ কমিয়ে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটি।
ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাগলিহার বাঁধে কাদামাটি পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এতে করে স্লুইস গেটগুলো নামিয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে পাকিস্তানের দিকে পানির প্রবাহ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশনের (NHPC) এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন, এই পদক্ষেপ ‘পরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণের অংশ’ হলেও, সময়টা মোটেও কাকতালীয় নয়।
একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, “আমরা বাগলিহার প্রকল্পের গেটগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। জলাধার পুনরায় পূর্ণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
এর পাশাপাশি পাকিস্তানের পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে ভারতীয় বন্দরগুলোতে ভিড়তে না দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে, যা দুই দেশের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
হিমালয়ের উত্তরে গুরেজ উপত্যকায় অবস্থিত কিশানগঙ্গা বাঁধেও বড় রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শিগগিরই শুরু হবে। সূত্র বলছে, পানি প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে এই বাঁধ ও বাগলিহার প্রকল্পের ডিজাইন নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে।
ভারত ইতিমধ্যে চেনাব নদী ও এর উপনদীতে চারটি বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যেগুলো ২০২৭-২৮ সালের মধ্যে চালু হওয়ার কথা।
এই প্রকল্পগুলো হলো:
- পাকাল দুল (১,০০০ মেগাওয়াট)
- কিরু (৬২৪ মেগাওয়াট)
- কওয়ার (৫৪০ মেগাওয়াট)
- রাতলে (৮৫০ মেগাওয়াট)
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রকল্পগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন যথাক্রমে ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী:
- পাকাল দুল প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি ৬৬%
- কিরুতে ৫৫%
- কওয়ারে ১৯%
- রাতলে প্রকল্পে ২১%
রাতলে প্রকল্পের কোফার ড্যাম নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
প্রায় ৯৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কিরথাই প্রকল্প এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায়। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৮ সালের নভেম্বরের মধ্যে রাতলে প্রকল্প সম্পূর্ণভাবে চালু হবে।
সবমিলিয়ে, পাকিস্তানের একপাক্ষিক সামরিক কর্মকাণ্ডের জবাবে এবার জলকূটনৈতিক পাল্টাঘুঁষি দিয়েছে ভারত। প্রশ্ন উঠেছে—এই জলের যুদ্ধ কতদূর যাবে?