চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি, চীন তাইওয়ানের কাছে ৬০টি যুদ্ধবিমান ও বেশ কয়েকটি সামরিক জাহাজ পাঠিয়ে শক্তি প্রদর্শন করেছে। চীনের এই সামরিক প্রদর্শন শুধু তাইওয়ান নয়, সমগ্র এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে।
এই প্রতিবেদনে আমরা চীন-তাইওয়ান সম্পর্কের পটভূমি, সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণ, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া, সম্ভাব্য ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করব। প্রতিবেদনে আমরা চীন-তাইওয়ান সম্পর্কের পটভূমি, সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণ, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া, সম্ভাব্য ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করব।
চীন তাইওয়ানকে তার সার্বভৌম ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে এবং “এক দেশ, দুই ব্যবস্থা” নীতির আওতায় এটি চীনের সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে, তাইওয়ান নিজেকে একটি স্বতন্ত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচালনা করছে।
- চীনের গৃহযুদ্ধের পর চিয়াং কাই-শেকের নেতৃত্বাধীন কুওমিনতাং (KMT) দল চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে পরাজিত হয়ে তাইওয়ানে আশ্রয় নেয়।
- কুওমিনতাং সরকার শুরুতে নিজেদের চীন প্রজাতন্ত্র (ROC) হিসেবে দাবি করলেও, পরবর্তী সময়ে এটি একটি স্বতন্ত্র শাসনব্যবস্থায় পরিচালিত হতে শুরু করে।
- চীন গণপ্রজাতন্ত্র (PRC) সবসময় তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে এসেছে।
- ১৯৭১: জাতিসংঘ চীন গণপ্রজাতন্ত্রকে (PRC) স্বীকৃতি দেয় এবং তাইওয়ান জাতিসংঘ থেকে বাদ পড়ে।
- ১৯৭৯: যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে ‘তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে তাইওয়ানের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দেয়।
- ১৯৯৫-১৯৯৬: “তাইওয়ান স্ট্রেইট ক্রাইসিস” – চীনের সামরিক মহড়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ।
- ২০০০-এর দশক: তাইওয়ানে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যা চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়ায়।
- ২০২২: যুক্তরাষ্ট্রের হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফর করেন, যা চীনের তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
তাইওয়ানের বর্তমান সরকার চীনের নিয়ন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করে আসছে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চায়। এতে চীন আরও বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্ট’-এর আওতায় তাইওয়ানকে সামরিক সহায়তা প্রদান করছে।
- মার্কিন যুদ্ধজাহাজ প্রায়শই তাইওয়ান প্রণালীতে টহল দেয়, যা চীন উত্তেজনার মূল কারণ হিসেবে দেখছে।
- সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
- চীন তার সামরিক সক্ষমতা বিশ্বকে দেখাতে চায় এবং এই অঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
- তাইওয়ানকে চাপে রাখতে এবং সম্ভাব্য একীভূতকরণের জন্য সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
- চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রমাণ করতে এবং জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতে তাইওয়ান ইস্যুকে ব্যবহার করতে পারেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
- মার্কিন সামরিক বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন, “আমরা তাইওয়ানের নিরাপত্তার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
- জাপান এই ঘটনার নিন্দা করেছে এবং বলেছে যে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখা জরুরি।
- দক্ষিণ কোরিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
- ইউরোপীয় দেশগুলো চীনের এ ধরনের সামরিক প্রদর্শনকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে।
- যদি চীন সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তবে এটি বিশ্বব্যাপী সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
- আন্তর্জাতিক চাপের মুখে চীন ও তাইওয়ান আলোচনার টেবিলে আসতে পারে।
- তাইওয়ান-চীন উত্তেজনা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের ক্ষেত্রে।
চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা শুধু এই দুই অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি বৈশ্বিক রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। চীন তার সামরিক শক্তি বাড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবে নিজের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে চাইছে, তবে এটি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। কূটনৈতিক সমাধান না হলে ভবিষ্যতে সামরিক সংঘর্ষের আশঙ্কা আরও প্রবল হয়ে উঠতে পারে।
তাইওয়ান সংকটের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের গতিপথের ওপর।