চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের “শুল্ক নির্ভর জুলুম” বা tariff bullying-এর বিরুদ্ধে চীনের সঙ্গে একসাথে অবস্থান নেয়।
এই মন্তব্য তিনি করেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ-এর সঙ্গে এক বৈঠকের পর, যেখানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও কৌশলগত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়।
সি চিনপিং বলেন:
🗣️ “শুল্ক যুদ্ধের কোনো বিজয়ী নেই। বিশ্ববাজারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানেই একঘরে হয়ে যাওয়া।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা শুল্কনীতিকে “আধিপত্য বিস্তারমূলক ও অনৈতিক” বলে বর্ণনা করেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সহযোগিতা চেয়েছেন।
এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন:
- যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫% করেছে, যা কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ১৪৫% পর্যন্ত উঠতে পারে।
- চীন পাল্টা জবাবে আমেরিকান পণ্যে ৮৪% শুল্ক আরোপ করেছে।
- চীনা অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে “চাঁদাবাজি ও বাণিজ্যিক জুলুম” হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে চীন চাইছে ইউরোপকে পাশে পেতে, যাতে একটি বহুপাক্ষিক ও একতরফাহীন বাণিজ্য ব্যবস্থা বজায় রাখা যায়।
চান কি এই অংশটা আমি আগের দীর্ঘ বিশ্লেষণে সংযুক্ত করি, নাকি আলাদা করে রাখতে চান?
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন আমদানি শুল্ক নীতির ফলে বর্তমানে চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ শতাংশে, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই শুল্কের হার আরও বাড়তে পারে, কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ক্ষেত্রে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এসব অতিরিক্ত শুল্ক মূলত চীনের সেইসব প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে আরোপ করা হয়েছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের মতে অবৈধভাবে ফেন্টানিল উৎপাদনে যুক্ত।
চীন এই পদক্ষেপের পাল্টা জবাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশ করেছে, যা পূর্বের ৩৪ শতাংশ থেকে দ্বিগুণেরও বেশি। বেইজিংয়ের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ এক ধরনের “ট্রেড টায়রানি” বা বাণিজ্যিক জুলুম, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির পরিপন্থী।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এই বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “চীন এই ধরনের আধিপত্যবাদী ও জুলুমমূলক নীতি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে এবং কখনোই মেনে নেবে না।” চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একে “এক ভুলের উপর আরেক ভুল” হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই কার্যকলাপ একটি “চাঁদাবাজির মত আচরণ।”
এদিকে, এই বাণিজ্য যুদ্ধ শুধু দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই – এর প্রভাব পড়ছে গোটা বিশ্ববাজারে। বিশেষ করে এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলোর ওপর এর তাৎক্ষণিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ইনসাইট ইনভেস্টমেন্টস-এর ইনভেস্টমেন্ট স্পেশালিস্ট প্রধান এপ্রিল লারুস বলেন, “এই বিরোধের প্রতিধ্বনি আগামী কয়েক মাস জুড়ে বাজারে শোনা যাবে। আমরা সমাধান চাই, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এটা সহজে শেষ হচ্ছে না।”
তিনি আরও যোগ করেন যে, যদিও ৯০ দিনের শুল্কবিরতির ঘোষণা কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে, তবে এটি কেবল একটি সাময়িক বিরতি। এই সময়টা ব্যবসাগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা তাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারে এবং শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে পণ্য মজুদ করে রাখতে পারে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং এই পরিস্থিতিকে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একত্রে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে এক বৈঠকে সি বলেন, “শুল্ক যুদ্ধে কারও বিজয় নেই। বিশ্ববাজারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া মানেই একঘরে হয়ে যাওয়া।”
ইউরোপের বিভিন্ন শেয়ারবাজারে সামান্য ইতিবাচক সূচনার মধ্যে ফ্রান্সের ক্যাক ৪০ সূচক ০.৮ শতাংশ এবং জার্মানির ডিএএক্স সূচক ১.০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রিটেনের FTSE 100 সূচকও ১ শতাংশ বেড়ে খুলেছে, যা চলমান বিশ্ববাজারের অস্থিরতার মধ্যে একটি স্বস্তির ইঙ্গিত।
তবে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের ০.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা ছাড়িয়ে গেলেও, বিশ্লেষকরা মনে করছেন এই বৃদ্ধি দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে। কারণ, এই মাস থেকে কার্যকর হওয়া নতুন কর বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি এখনও অর্থনীতিতে সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয়নি। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক যুক্তরাজ্যের রপ্তানি বাজারে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকস-এর ডেপুটি চিফ ইকোনমিস্ট রুথ গ্রেগরি মন্তব্য করেছেন, “এই অপ্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি সম্ভবত দীর্ঘস্থায়ী হবে না। এখান থেকে অর্থনীতি খুব বেশি উন্নতি করার সম্ভাবনা নেই।”
সব মিলিয়ে, ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি এবং চীনের প্রতিক্রিয়া একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, যার ধাক্কা এশিয়া, ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্য – সব অঞ্চলের ওপরই পড়ছে এবং আগামী কয়েক মাসে বিশ্ববাজারে এর প্রভাব আরও তীব্রভাবে অনুভূত হতে পারে।