গাজায় ইসরায়েলের পুনরায় আক্রমণের ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে দক্ষিণে পালিয়ে যাচ্ছেন, এবং তারা পুনরায় বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছেন। কিছু ফিলিস্তিনি গাজার ইয়র্মুক স্টেডিয়ামের কাছে একটি ল্যান্ডফিলের পাশে তাঁবু ফেলে আশ্রয় নিয়েছেন, যেখানে তারা আবর্জনার স্তূপের মধ্যে বাস করছেন।
গাজার মানবিক সঙ্কট: পুনর্নবীকৃত সংঘর্ষের মধ্যে বাস্তুচ্যুতির সংগ্রাম
উদাহরণস্বরূপ, উইদাদ সোবহ, ৪৭, বলেন, “আমরা কোথাও যেতে পারছি না। এই স্থানেই এসেছি এবং এখানে থাকতে বাধ্য হয়েছি। এখানে কোথায় যাবো?” তিনি আরও জানান, “এখানে কিছুই নেই, সব কিছু আবর্জনা, পানি একদম বিশুদ্ধ নয়।”
গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে পালিয়ে আসা আরো একজন, সাবাহ মারুফ, জানান, তিনি এবং তার পরিবার একটি ফুটবল স্টেডিয়ামে আশ্রয় নিয়েছেন, যা এখন আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা কোথাও সাহায্য পাচ্ছি না, বা কেউ আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখছে না। এখানে গন্ধ এবং ময়লা আমাদের ধ্বংস করে দিচ্ছে।”
গাজা শহরের অন্যান্য অঞ্চলের মতো, যাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, তারা সেখানেও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। গাজা শহরের একটি স্থানীয় পরিবারের সদস্য, মা’জুওজা ফাতি সোবহ, ৪৮, জানান, “এই ময়লার সাথে থাকা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। যখন বৃষ্টি হয়, আমাদের চট এবং কম্বল ভিজে যায়, এবং এখানে আবর্জনার পানি সেগুলোতে প্রবাহিত হয়।”
এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠেছে, কারণ ইসরায়েলের আক্রমণ গত সপ্তাহে আরও তীব্র হয়েছে এবং ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। দক্ষিণে পালিয়ে যাওয়া হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে যে, তারা কোথায় আশ্রয় নিবে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, ইসরায়েল কাটজ, শুক্রবার ঘোষণা করেছেন যে, ইসরায়েল হোস্টেজ মুক্তির জন্য সর্বাত্মক চাপ সৃষ্টি করবে এবং গাজার দক্ষিণে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তর করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
বিশ্বব্যাপী মানবিক সংকটের মধ্যে, গাজার মানুষ নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে। ক্ষুধা, উদ্বাস্তুত্ব এবং যুদ্ধের তীব্রতা গাজাকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সহায়তা ও সমর্থনের জন্য তারা আশাপ্রকাশ করছে।
গাজা উপত্যকা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং আঞ্চলিক সংঘর্ষের ক্ষেত্র ছিল। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার ফলে এর মানবিক পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে, এবং হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুহীন হয়ে পড়েছে, যারা বাঁচার জন্য সংগ্রাম করছে। এই প্রবন্ধে আমরা গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের অভিজ্ঞতা, তাদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস এবং তাদের বাঁচার সংগ্রাম নিয়ে আলোচনা করবো।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় শুরু হওয়া সাম্প্রতিক সংঘর্ষটি ছিল একটি নাটকীয় উত্তরণ, যা ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষের এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। হামাসের আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলি বাহিনী গাজায় বিমান হামলা এবং স্থল অভিযানে নেমে পড়ে, যার ফলে ব্যাপক বিধ্বংসনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। হাজার হাজার বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায় এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া: প্রথম কয়েক দিনের মধ্যেই পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় কিছু এলাকায়, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
সীসফায়ার ভেঙে পড়া: সাময়িক সীসফায়ার ভেঙে গিয়ে নতুন করে বিমান হামলা শুরু হয়, যার ফলে মানুষদের দুর্দশা আরও বেড়ে যায়।
মৃত্যু ও ধ্বংস: শুধুমাত্র প্রথম কয়েক দিনে ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হন, এবং আহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। হাসপাতালে যে বিপুল চাপ পড়েছে তা সঠিকভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হয়নি।
যুদ্ধের তীব্রতায় গাজার বাসিন্দারা নিজেদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তারা যেসব অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল, সেখানে ছিল অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং বিপুল overcrowding (ভিড়)।
বাস্তুচ্যুতি এবং জোরপূর্বক অভিবাসন: ইসরাইলি বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এই অবস্থায়, হাজার হাজার মানুষ এক স্থান থেকে আরেক স্থানে চলে আসে, কিন্তু অধিকাংশই উপযুক্ত আশ্রয়ের অভাবে সমস্যায় পড়েছে।
ইয়ারমুক স্টেডিয়ামের শরণার্থী শিবির: গাজার বিভিন্ন স্থান থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে, পরিবারগুলি নোংরা পরিবেশে, ময়লার স্তুপের মধ্যে তাঁবু ফেলেছে। যেমন, উইদাদ সোবহ তার পরিবারসহ উত্তর গাজার বিট লাহিয়া থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে যমরুক স্টেডিয়ামে আশ্রয় নেয়। সোবহ জানান, “এটাই ছিল একমাত্র স্থান যেখানে আমরা থাকতে পেরেছি, কিন্তু এখানে অবস্থান করা খুবই কষ্টকর।”
গাজার এই সংকট শুধু সামরিক নয়, এটি একটি বড় মানবিক সঙ্কট। খাবার, পানি, আশ্রয়, চিকিৎসা—এই সবকিছুই অব্যাহতভাবে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। গাজার স্থানীয় হাসপাতালগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং মানবিক সাহায্য প্রবাহও সীমিত হয়ে পড়েছে।
মানবিক সাহায্যের অভাব: গাজার সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে খাদ্য এবং জ্বালানি সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজার উপকূল বন্ধ করে দিয়েছে, ফলে ফিলিস্তিনিদের কাছে জীবনযাত্রার অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
পানির সংকট: গাজার পানির উৎসগুলোর বেশিরভাগই ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং পানীয় জল সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে।
চিকিৎসা সেবা: হাসপাতালগুলো overwhelmed (অতিরিক্ত চাপ) হয়ে পড়েছে। আহতদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং কর্মী না থাকায়, জীবন রক্ষা করতে অনেক সময় বিলম্ব হচ্ছে।
গাজার বাসিন্দারা দিন দিন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। কোনো নিরাপত্তা নেই, আশ্রয় নেই, খাবারের অভাব। তাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যও চরমভাবে বিপন্ন হচ্ছে।
শিশুদের অবস্থা: হাজার হাজার শিশু যুদ্ধ, বাস্তুচ্যুতি এবং ভয়াবহ পরিবেশের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাঁদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে।
মহিলা ও বৃদ্ধদের পরিস্থিতি: মহিলাদের জন্য আশ্রয় এবং সহায়তা পাওয়া কঠিন। সেই সঙ্গে বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিরাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
পরিবারের প্রতি যত্ন: পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে, গাজার বাসিন্দাদের মাঝে নিঃস্বার্থ সংগ্রাম চলছে। অনেকেই উপযুক্ত খাবার বা পানির অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন।
বিশ্ব নেতারা এই পরিস্থিতির প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন? বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং রাষ্ট্রগুলো কিভাবে গাজার মানুষের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়েছে?
জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়: জাতিসংঘ সহ অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কিন্তু সীমিত সহায়তা প্রদানে বাধা রয়েছে।
ইসরাইলি অবস্থান এবং প্রতিক্রিয়া: ইসরাইলি সরকার নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে গাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এদিকে, ইসরাইলের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি এবং আক্রমণের প্রতি আন্তর্জাতিক সমালোচনা হয়েছে।
সমাধানের পথে পদক্ষেপ: গাজার সংকট সমাধানে বৈশ্বিক পদক্ষেপের গুরুত্ব এবং সম্ভাব্য সমাধানগুলি নিয়ে আলোচনা।
গাজার ভবিষ্যৎ কী? এই মহামানবিক সংকটের সমাপ্তি কবে আসবে? শান্তির জন্য আন্তর্জাতিক প্রয়াস, এবং গাজার জনগণের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছু পূর্বাভাস।
রাজনৈতিক সমাধান: ইসরাইল-ফিলিস্তিন সম্পর্কের উন্নতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় কীভাবে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণ: গাজার ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ এবং বাসিন্দাদের পুনর্বাসন।
আন্তর্জাতিক সাহায্যের ভূমিকা: বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কীভাবে গাজার জন্য সহায়তা প্রদান করতে পারে এবং সেই সহায়তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী হতে পারে?
গাজা উপত্যকার সংকট শুধু ভূরাজনৈতিক নয়, এটি একটি মানবিক বিপর্যয়। যুদ্ধ, বাস্তুচ্যুতি এবং আক্রমণের ফলে এখানকার মানুষ যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা আমাদের সকলকে গভীরভাবে ভাবিত করে। যত দ্রুত সম্ভব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান দরকার।