মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ আরও চড়া। ইসরায়েলের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর ধ্বংসাত্মক হামলার পর এবার ইরান পাল্টা জবাবে সরাসরি ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তেহরান এই প্রতিক্রিয়াকে বলছে, “সত্যিকারের প্রতিশোধ”।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী জানায়, শুক্রবার রাতের এ অভিযানে তেলআভিভ, হাইফা ও জেরুজালেমসহ একাধিক শহরে সাঁই সাঁই করে উড়ে যায় ডজনখানেক ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। আকাশে আলোর ঝলকানি আর বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে জনজীবন। ইসরায়েল জানায়, ‘আয়রন ডোম’ সিস্টেমের মাধ্যমে বহু ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা গেলেও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভেদে সফল হয়েছে।
নিহত ও আহতদের সংখ্যা বাড়ছে
তেলআভিভের একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে ৩ জন নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হন বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালগুলোতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক টেলিভিশন ভাষণে ইরানি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন:
“এই লড়াই ইরানি জনগণের সঙ্গে নয়, বরং তোমাদের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। যারা সন্ত্রাস ছড়িয়ে, সন্তানদের যুদ্ধের আগুনে ঠেলে দিচ্ছে। ইরানিরা যদি শান্তি চায়, তাহলে শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও।”
তিনি আরও বলেন, “এই হামলার জবাব আরও ভয়াবহভাবে দেওয়া হবে। ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে আমরা কোনও দ্বিধা করব না।”
বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ
এই পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এই সংঘর্ষ অঞ্চলটিকে ভয়াবহ অস্থিরতা ও মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। তবে চীন ও রাশিয়া ইসরায়েলের “আক্রমণাত্মক মনোভাব” নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ভবিষ্যৎ শঙ্কা
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাত যদি দ্রুত থামানো না হয়, তবে এটি সিরিয়া, লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইতিমধ্যেই হিজবুল্লাহ ও হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘সহযোগিতার’ ঘোষণা দিয়েছে।
সারসংক্ষেপে:
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত আর ছায়াযুদ্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন প্রকাশ্য ও সরাসরি সামরিক সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে। দু’দেশের এই উত্তপ্ত অবস্থান শুধু তাদের জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি।