বর্তমানে ইরান ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আন্তর্জাতিক আইন এবং পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী সীমাবদ্ধতার চেয়ে অনেক বেশি, এবং এটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইরান যদি এই ইউরেনিয়ামকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়, তবে তা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট পরিমাণে উপযোগী হতে পারে।
ইরান তার পরমাণু কর্মসূচির জন্য ২০১৫ সালে “কম্প্রিহেনসিভ জয়েন্ট অ্যাকশন প্ল্যান” (JCPOA) চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, যেখানে ইরানকে তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ৩.৬৭ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার শর্ত ছিল, এবং তা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য। তবে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফা চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে এবং ইরানকে অবরোধের মুখে ফেললে, ইরান তার পরমাণু কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয় এবং এই অবস্থানটি আরও তীব্র হয়।
ইরান দাবি করছে যে তার পরমাণু কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ শক্তি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে, যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন, কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো সন্দেহ করছে যে ইরান আসলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উদ্দেশ্যেও এই কর্মসূচি চালাচ্ছে। তারা অভিযোগ করছে যে, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া এবং পরমাণু প্রযুক্তির উন্নতি একটি সামরিক উদ্দেশ্যকে সহায়তা করতে পারে, যা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
ইরানের পরমাণু কার্যক্রম এবং তার ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি করেছে। ইউরোপীয় দেশগুলো, বিশেষ করে জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য, ইরানের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে এবং তারা পুনরায় পরমাণু চুক্তির শর্তাবলীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার জন্য ইরানকে আহ্বান করেছে। যদিও ইরান তার পরমাণু কার্যক্রম শর্তসাপেক্ষে সীমিত করার জন্য চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি দেখিয়েছে, কিন্তু তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের এই স্তর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচির এই নতুন মাত্রা এবং ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ও কূটনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এটি পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি এবং পারমাণবিক অস্ত্রবিরোধী আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে।