সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার মধ্যে ইরান তার প্রতিবেশী দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি বিস্তৃত সামরিক অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করে দিয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, যদি কোনো দেশ ইসরায়েলকে ইরানের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বা পাল্টা পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে, তাহলে তাদের সরাসরি যুদ্ধবিরোধী হিসেবে গণ্য করা হবে।
এই হুমকিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে পারস্য উপসাগর অঞ্চলে অবস্থিত এসব দেশের সামরিক ঘাঁটি এবং সেইসাথে পারস্য উপসাগর ও লাল সাগরের জলসীমায় মোতায়েন তাদের নৌবাহিনী। অর্থাৎ, ওই অঞ্চলে যে কোনো ধরনের সামরিক অবকাঠামো বা বাহিনী ইসরায়েলের সাথে সক্রিয় সহযোগিতা করলে তারা একইসাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে বলে ইরান দাবি করেছে।
যুক্তরাজ্যের সরকার দ্রুত এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে যে তারা ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে কোনো ধরনের সাহায্য বা ইরানি ড্রোন প্রতিরোধে সহায়তা প্রদান করছে না। অন্যদিকে, ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রো একটি আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে বলেছেন, “ফ্রান্স ইসরায়েলের পাশে থাকবে, যদি তারা ইরান থেকে হামলার মুখে পড়ে, তবে তেহরানের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেবে না।”
ইউনাইটেড স্টেটসের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আক্রমণকে ‘উত্তম’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আগেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুকে পারমাণবিক আলোচনা ব্যাহত না করার জন্য সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু বর্তমানে তিনি মনে করেন যে ইরান তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করার “দ্বিতীয় সুযোগ” পেয়েছে, যাতে আরও বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ এড়ানো যায়।
এই সতর্কতা এবং উত্তেজনা এমন সময়ে এসেছে যখন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অতি সংবেদনশীল এবং গত কয়েক মাসে বিভিন্ন হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে বিবাদ পারমাণবিক কর্মসূচি, সামরিক উপস্থিতি ও প্রভাব বিস্তারের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে, যা এখন সামরিক সংঘাতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের এই নতুন হুমকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় শক্তিগুলোর কূটনৈতিক অবস্থানের ওপর চাপ বাড়াবে এবং ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ও কূটনৈতিক অবস্থান আরও জটিল করে তুলতে পারে। অন্যদিকে, এই ধরনের উত্তেজনা সাধারণ নাগরিকদের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
পরিস্থিতি ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে উঠছে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা নিতে আহ্বান জানাচ্ছে।