বিশেষ প্রতিবেদন | তেহরান ও জেরুজালেম থেকে
ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি প্রধান বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এই বিস্ফোরণের ফলে বেশ কয়েকজন নিহত ও আহত হয়েছেন, তবে প্রকৃত সংখ্যা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
তেহরানের কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে “শিল্প দুর্ঘটনা” বলে বর্ণনা করলেও, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন—এটি হয়তো ইসরায়েলের পরিচালিত একটি ‘গোপন হামলা’ হতে পারে।
এই সন্দেহের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, কারণ ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বর্তমানে চলমান গোপন সাইবার ও সামরিক যুদ্ধ গত কয়েক মাসে আরও তীব্র হয়েছে।
বিস্ফোরণের কারণ কী?
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিস্ফোরণটি ইরানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর বান্দর আব্বাসে বা চাবাহারে ঘটতে পারে, যা দেশটির অন্যতম প্রধান সামরিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
তবে ইরানের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো স্থান নিশ্চিত করা হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাতের অন্ধকারে হঠাৎ করেই বন্দরের একটি অংশে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে, যা কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও দেখা গেছে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, আশপাশের বেশ কয়েকটি স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফারস জানায়,
“প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, এটি কোনও শিল্প-কারখানায় গ্যাস লিকেজজনিত বিস্ফোরণ। তবে আমরা এখনো নিশ্চিত নই।”
কিন্তু কিছু আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা এবং ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম বলছে, এই বিস্ফোরণের পেছনে হয়তো ইসরায়েলের গোপন সামরিক অপারেশন বা সাইবার হামলার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইসরায়েলের সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতা
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং সামরিক অবকাঠামোর বিরুদ্ধে গোপন হামলা চালিয়ে আসছে।
গত কয়েক বছর ধরেই ইরানে সন্দেহজনক বিস্ফোরণ, সাইবার হামলা ও গুপ্ত হামলার ঘটনা ক্রমশ বেড়েছে, যার বেশিরভাগের পেছনে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ-এর হাত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন,
- সাম্প্রতিক উত্তেজনা – কিছুদিন আগেই ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। দু’দেশই একে অপরকে সরাসরি হুমকি দিয়েছে।
- সাইবার যুদ্ধ – ইসরায়েল অতীতে ইরানের পরমাণু স্থাপনা ও সামরিক অবকাঠামোতে ‘সাইবার হামলা’ চালিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল স্টাক্সনেট (Stuxnet) ম্যালওয়্যার হামলা।
- সামরিক প্রতিশোধ – সম্প্রতি ইরান সিরিয়ায় ইসরায়েলের একটি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এটি তার পাল্টা জবাব হতে পারে।
তবে ইসরায়েল এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেনি।
ইরানের প্রতিক্রিয়া
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এই বিস্ফোরণকে “সন্দেহজনক” বলে অভিহিত করেছেন এবং জানিয়েছেন,
“আমরা এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করছি। শত্রুদের যেকোনো চক্রান্তের কঠোর জবাব দেওয়া হবে।”
ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ড (IRGC) ইতোমধ্যে সন্দেহভাজন নাশকতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি, তবে পেন্টাগনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন,
“আমরা মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”
বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই হামলার পেছনে ইসরায়েলের হাত থাকে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।
পরবর্তী কী ঘটতে পারে?
✅ ইরান প্রতিশোধ নিতে পারে – ইরান অতীতে ইসরায়েলের ওপর পাল্টা হামলা চালিয়েছে। এবারও তারা একই পদক্ষেপ নিতে পারে।
✅ আরও সাইবার হামলা – দুই দেশই সাইবার যুদ্ধের মাধ্যমে একে অপরকে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
✅ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি – ইসরায়েল-ইরানের এই লড়াই সিরিয়া, লেবানন এবং অন্যান্য দেশেও প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্তমানে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে “ছায়াযুদ্ধ” বা “Shadow War” চলছে, যেখানে সরাসরি যুদ্ধের পরিবর্তে গোপন হামলা, গুপ্তচরবৃত্তি ও সাইবার যুদ্ধ ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই বিস্ফোরণ কি ইসরায়েলের ‘গোপন অভিযানের’ অংশ, নাকি সত্যিই একটি শিল্প দুর্ঘটনা?
এটি স্পষ্ট হতে আরও কয়েক দিন লাগতে পারে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে বড় উত্তেজনার সূচনা যে হয়ে গেছে, তা নিশ্চিত।