ইউএস সরকারের পরমাণু সহায়তা কাটছাঁটের কারণে আগামী ৪ বছরে বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন ২,০০০ নতুন এইচআইভি সংক্রমণ এবং ৬ মিলিয়নেরও বেশি মৃত্যু ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ইউএনএইডস এর নির্বাহী পরিচালক উইনি বায়ানইমা। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত একটি বৈশ্বিক লড়াইয়ে গভীর অবনতি সৃষ্টি করবে, যেখানে গত দুই দশকে এইচআইভি সংক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা ২০০৪ সালে ২ মিলিয়ন থেকে কমে ২০২৩ সালে ৬০০,০০০ তে নেমে এসেছিল।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় এইচআইভি সহায়ক প্রতিষ্ঠান ইউএনএইডসের প্রধান উইনি বায়ানইমা ইউএস সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এর ফলে যারা জীবনের জন্য সংগ্রাম করছেন, তাদের দুর্দশা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন। তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্তের ইতোমধ্যে গভীর এবং ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়ছে, বিশেষ করে মহিলাদের এবং মেয়েদের উপর।”
প্রসঙ্গত, ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে তার প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম কার্যদিবসে বিদেশী সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন, যা বিশেষত এইচআইভি প্রোগ্রামগুলোকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। আমেরিকার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) এর অধিকাংশ প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং এর ফলে এইচআইভি চিকিৎসা ও প্রতিরোধ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এই সহায়তা কাটছাঁটের কারণে অনেক দেশে মা ও শিশু ক্লিনিক বন্ধ হয়ে গেছে এবং এন্টি-রেট্রোভাইরাল (এআরভি) ঔষধের সংকট দেখা দিয়েছে, যা এইচআইভিরোগীদের জন্য জীবন রক্ষাকারী।
উইনি বায়ানইমা উল্লেখ করেছেন যে, সন্দ্বীপ-এর মতো দ্বীপাঞ্চলে যেখানে দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না, সেখানে এই ধরনের সহায়তার জন্য পূর্বের অভাব নতুন সংকট তৈরি করবে। তিনি বলেন, “এটি শুধু সন্দ্বীপের জন্য নয়, পুরো চট্টগ্রামের জন্য একটি আনন্দের দিন। স্বাধীনতার মাসে আপনাদের এই সুখবর দিতে পেরে আমি আনন্দিত। সন্দ্বীপের এই অগ্রযাত্রা আজ শুরু হলো, যা আরও সুন্দর হবে।”
এছাড়া, তিনি ১৯৯০ দশকের কথা স্মরণ করে বলেন, তখন এইচআইভি চিকিৎসা অতি অল্প দেশেই পাওয়া যেত এবং সেসব দেশে এইচআইভি সংক্রমণ এবং মৃত্যু বেড়ে গিয়েছিল। তিনি আবারও বলেন, “আমরা একসময় সেই দুঃসময় দেখতে পারি, যখন মানুষ সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছিল না।” তিনি একটি চুক্তির প্রস্তাবও দিয়েছেন যেখানে লেনাকাপাভির নামে একটি নতুন এআরভি (এন্টি-রেট্রোভাইরাল) ওষুধ মার্কেটে আনার সুযোগ থাকতে পারে। এটি জিলিয়াড কোম্পানি তৈরি করেছে, যা প্রতি ছয় মাসে একবার ইনজেকশন হিসেবে নিতে হয় এবং ইউএনএইডস মনে করে যে, এটি ১০ মিলিয়ন মানুষকে উপকৃত করতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) আগেই জানিয়েছিল, যদি এই ইউএস সহায়তার কাটছাঁট চলতে থাকে, তাহলে নাইজেরিয়া, কেনিয়া, লেসোথো, দক্ষিণ সুদান, বুরকিনা ফাসো, মালি, হাইতি এবং ইউক্রেন এই দেশগুলোর মধ্যে এইচআইভি চিকিৎসা ঔষধের সংকট হতে পারে। WHO এর মহাপরিচালক টেড্রোস আধানোম গেব্রেইয়েসুস বলেন, “এই ধরনের বিচ্ছিন্নতা বিশ্বজুড়ে এইচআইভি কর্মসূচির ২০ বছরের অগ্রগতি শেষ করে দিতে পারে।”
এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান এইডস সংগঠন Treatment Action Campaign (TAC) জানিয়েছে, তাদের দেশ আবার সেই সময়ের দিকে ফিরে যেতে পারে যখন এইচআইভি রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হতেন। TAC এর চেয়ারম্যান সibongile Tshabalala বলেন, “আমরা মরতে পারি না, আমরা আবার সেই বছরগুলোতে ফিরে যেতে পারি না যেখানে আমরা চিকিৎসা সেবা পেতে কষ্ট পেতাম।”
এছাড়া, ইউএনএইডস মার্কিন সরকারকে নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে যাতে তারা লেনাকাপাভির নামের নতুন এআরভি ওষুধ ব্যবহার করে মার্কেটে নতুন উপায়ে চিকিৎসা পেতে পারে। এমন একটি চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের লাভ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
বিশ্বব্যাপী এই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে, কারণ ইউএনএইডস এবং অন্যান্য জাতিসংঘ সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই কাটছাঁট এবং সহায়তার অভাবের কারণে বড় সংকটে পড়েছে। ইউএনICEF এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (WFP) সহ অন্যান্য সংস্থাগুলি জানিয়েছে, তারা তাদের কার্যক্রম সীমিত করতে বাধ্য হচ্ছে, যা বিশ্বের উন্নয়ন প্রচেষ্টা এবং মানবিক সহায়তার কাজ-এ মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করবে।
এই সহায়তা কাটছাঁটের ফলে বিশ্বব্যাপী এইচআইভি রোগীদের জন্য চিকিৎসা ও সেবার এক বৃহত্তর সংকট তৈরি হবে এবং এটি মূলত দরিদ্র দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হবে।