লন্ডনে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সম্মেলনের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক মিত্রদের কাছ থেকে ইউক্রেনের প্রতি দৃঢ় সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি, যারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে ব্যাপক সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সম্মেলনের পর তার প্রথম বার্তায় জেলেনস্কি বলেছেন, “আমরা ইউক্রেনের জন্য শক্তিশালী সমর্থন অনুভব করছি। এই সম্মেলন দেখিয়েছে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য আমাদের সঙ্গে রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, যে আলোচনাগুলোর মাধ্যমে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশগুলো ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে শান্তি আলোচনায় শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেছেন যে, সামরিক সহায়তার পাশাপাশি শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, “এটি কেবল ইউক্রেনের শহরগুলো রক্ষা করার ব্যাপার নয়। এটি আমাদের ভবিষ্যত এবং আমাদের সন্তানদের স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়।”
সম্মেলনে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য একটি নতুন “কোলিশন অফ দ্য উইলিং” তৈরি করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ফ্রান্স সহ একাধিক ইউরোপীয় দেশও রয়েছে। এই জোট শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সম্মুখসেনায় সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিবে। জেলেনস্কি এই জোটের প্রতি তার সমর্থন জানান এবং বলেন, “আমরা যদি শক্তিশালী না হই, তবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হবে, এবং এই প্রতিশ্রুতি আমাদের সেই শক্তি দেয়।”
এই জোটের উদ্দেশ্য হল ইউক্রেনের সংক্ষিপ্তমেয়াদী প্রতিরক্ষা সহায়তা প্রদান, পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। জেলেনস্কি আরও বলেন, যে কোনও শান্তি চুক্তির সময় ইউক্রেনকে শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে হবে।
জেলেনস্কি শান্তি প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সমর্থন আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা কোনও শান্তি চুক্তিতে অক্ষুণ্ণ থাকতে হবে। “আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে শান্তি আসলে একটি স্থায়ী শান্তি হবে, যা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সম্মানিত করবে। ইউক্রেনের জন্য সত্যিকারের শান্তি প্রাপ্য।”
শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের জন্য £১.৬ বিলিয়ন মিসাইল চুক্তি ঘোষণা করা হয়, যার মাধ্যমে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে। এই মিসাইলগুলো রাশিয়ার ড্রোন ও মিসাইল আক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করবে। জেলেনস্কি বলেন, “এটি ইউক্রেনের অবকাঠামোকে রক্ষা করবে এবং ভবিষ্যতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে সাহায্য করবে।”
এছাড়া, জেলেনস্কি আরও জানান যে, ইউক্রেনের বাহিনী ইতিমধ্যে মিসাইলগুলি ব্যবহার করছে এবং এই চুক্তি তাদের সামরিক সক্ষমতাকে আরও উন্নত করবে।
জেলেনস্কি এই সম্মেলনকে ইউক্রেন ও আন্তর্জাতিক মিত্রদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এই সহায়তা কেবলমাত্র আজকের দিনটির জন্য নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যত এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।”
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তার ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা শক্তি এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য এই সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লন্ডনের শীর্ষ সম্মেলনটি ইউক্রেনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল, যেখানে আন্তর্জাতিক মিত্ররা ইউক্রেনের জন্য ব্যাপক সামরিক সহায়তা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জেলেনস্কির বার্তা ইউক্রেনের প্রতি গভীর সমর্থন এবং ভবিষ্যতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যকে স্পষ্ট করেছে।
যতদূর পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে, ইউক্রেনের মিত্ররা তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখবে, যা ইউক্রেনকে রাশিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে।