সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর প্রতিনিধি :
দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে শীতের আমেজ যত বাড়ছে, ততই জমে উঠছে লেপ–তোষক তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা। শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেপ–তোষকের চাহিদা। এসব তৈরিতে ব্যবহার হওয়া তুলার দামও বেড়েছে।
শিমুল তুলা সবচেয়ে দামী—কেজি প্রতি ২০০ টাকা পর্যন্ত। আর কাপাস ও গার্মেন্টসের তুলা ৫০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তুলার দামের ওপরই নির্ভর করছে লেপ–তোষকের দাম। বর্তমানে একটি লেপের দাম ১,২০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত।
লেপ–তোষক ব্যবসায়ীরা জানান, সারা বছর বালিশ ও তোষকের বিক্রি চললেও লেপের চাহিদা থাকে মূলত শীতে। তাই শীতের মৌসুম ঘিরে এখনই ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। একজন কারিগর প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাতটি পর্যন্ত লেপ তৈরি করতে পারেন। এ মৌসুমে বাড়তি চাহিদার কারণে তাদের কমিশনও অন্যান্য সময়ের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যায়।
দিনাজপুর শহরের চুরিপট্টি এলাকায় সারিবদ্ধভাবে গড়ে উঠেছে লেপ–তোষকের দোকান। প্রতিটি দোকানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে তুলা। ক্রেতারা তুলা বাছাই করে নিজের পছন্দমতো লেপ–তোষক বানিয়ে নিচ্ছেন। কেউ আবার পুরোনো লেপ ধুলাই করে নতুন ভাবে সাজিয়ে নিচ্ছেন।
চুরিপট্টি এলাকার লেপ–তোষক ব্যবসায়ী মো. তৈয়ব আলী বলেন, আমাদের ব্যবসা মূলত ডিসেম্বর মাসেই জমে ওঠে। তবে এবার এখনো তেমন শীত পড়েনি, তাই চাহিদা খুব একটা বাড়েনি। আশা করছি, দু–একদিনের মধ্যে ঠান্ডা বাড়লেই বিক্রি অনেক বেড়ে যাবে।
ব্যবসায়ী মো. সোহাগ বলেন, শীতে আমাদের দোকানে তুলার সরবরাহ রাখতে হয় বেশি। ক্রেতারা নিজেদের মতো তুলা বেছে নিচ্ছেন। আমাদের কারিগররা রাত পর্যন্ত কাজ করছেন। একেকটি লেপ ১,২০০ থেকে ৫,০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
লেপ তৈরির কারিগর হাসান আলী বলেন, এখন ব্যস্ততা বেশ বেড়েছে। আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যেই একটি লেপ তৈরি করা যায়। প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাতটি লেপ প্রস্তুত করছি। মজুরিও ভালো পাচ্ছি—সংসারও ভালোমতো চলছে।
কারিগর মনসুর আলী জানান, আমরা সারাবছর শীতকালীন এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই চাহিদা আরও বাড়বে বলে আশা করছি। এতে আমাদের আয়ও বাড়বে।
লেপ ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, শিমুল তুলা দিয়ে একটি লেপ বানাতে সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তুলা ভালো পেয়েছি। দাঁড়িয়ে থেকেই লেপ বানিয়ে বাসায় নিচ্ছি। শীত বাড়ার আগেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বালিশ ক্রেতা হাবিবুর রহমান জানান, চারটি বালিশ ও একটি তোষক বানাচ্ছি। দোকানে ভিড় রয়েছে, তবুও নির্দিষ্ট সময়েই ডেলিভারি পাচ্ছি। দামটাও তুলনামূলক ঠিক আছে।
দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি নুরুল হুদা দুলাল বলেন, “উত্তরাঞ্চলে শীত একটু বেশি হওয়ায় মোটা কাপড়ের পাশাপাশি লেপ–তোষক অপরিহার্য। সারা বছর লেপ প্রয়োজন না হলেও শীতে এর চাহিদা হঠাৎই বেড়ে যায়। অনেকে সামর্থ্য অনুযায়ী লেপ তৈরি করেন, আর অসহায় মানুষের জন্য সরকারিভাবেও কম্বল বিতরণ করা হয়। ভালো ঘুমের জন্য লেপ–তোষকের বিকল্প নেই।

