সম্প্রতি ইসলামি আলোচক আমীর হামজা এক বক্তব্যে আল্লাহর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে ‘সাংবাদিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছেন—যেহেতু নবী (সা.) ছিলেন আল্লাহর বার্তাবাহক, তাই রূপক অর্থে তাঁকে সাংবাদিক বলা যেতে পারে। কিন্তু ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে এই তুলনা বিভ্রান্তিকর এবং রাসুলুল্লাহর মর্যাদার পরিপন্থী।
বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষও বিষয়টি নবীর শানের অবমাননা হিসেবে দেখছেন।
১. বার্তার প্রকৃতি ভিন্ন
সাংবাদিক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে সমাজকে জানায়; তাঁর কাজ মানবীয় পর্যবেক্ষণনির্ভর। অপরদিকে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন আল্লাহপ্রেরিত বার্তাবাহক—যিনি আসমানি ওহির মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্যের পথে আহ্বান করেছেন। কোরআনে বলা হয়েছে,
“তিনিই সেইজন, যিনি তাঁর রাসুলকে হিদায়াত ও সত্য ধর্মসহ পাঠিয়েছেন…” (সুরা আস-সাফ: ৯)।
অতএব, নবী ছিলেন আসমানি বার্তার বাহক, মানবীয় সংবাদদাতা নন।
২. মানবীয় বনাম ঐশী ত্রুটিমুক্ততা
সাংবাদিকের প্রতিবেদনে পক্ষপাত বা ত্রুটি থাকতে পারে, কিন্তু রাসুলের (সা.) বার্তা সম্পূর্ণ নির্ভুল ও আল্লাহপ্রদত্ত। তাই তাঁকে সাংবাদিকের সঙ্গে তুলনা করা শুধু শব্দের অপপ্রয়োগ নয়, বরং ঐশী মর্যাদার অবমূল্যায়ন।
৩. উৎস ও উদ্দেশ্যের পার্থক্য
সাংবাদিকের তথ্যের উৎস মানুষ; রাসুলের (সা.) সংবাদ আসে সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে। তাঁর প্রতিটি কথা ও কাজ ওহির আলোকে পরিচালিত—
“তিনি নিজের খেয়াল-খুশি থেকে কথা বলেন না; এটি তো ওহি, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়।” (সুরা আন-নাজম : ৩-৪)।
অতএব, নবীর বক্তব্য ও সাংবাদিকের বক্তব্যের উৎস ও প্রেরণা একেবারেই ভিন্ন।
৪. সময় ও পরিপ্রেক্ষিত
সাংবাদিকতা সময়নির্ভর; আজকের খবর কাল অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) যে বার্তা এনেছেন, তা চিরন্তন ও সর্বজনীন—সব যুগের মানুষের জন্য সমান প্রযোজ্য।
৫. দায়িত্বের প্রকৃতি
সাংবাদিকতা একটি পেশা; রাসুলত্ব একটি ইলাহি দায়িত্ব। সাংবাদিক ইচ্ছা করলে পেশা পরিবর্তন করতে পারেন, কিন্তু রাসুল (সা.) ছিলেন আল্লাহনিযুক্ত নবী, যিনি কেবল তাঁর সন্তুষ্টির জন্য দাওয়াত দিয়েছেন।
৬. উদ্দেশ্যের মৌলিক পার্থক্য
সাংবাদিক মানুষকে দুনিয়ার খবর দেন, আর রাসুল (সা.) মানুষকে দেন দুনিয়া ও আখিরাতের পরিণতির খবর। তাঁর বার্তা কেবল তথ্য নয়, বরং জীবনবিধান।