বিশেষ প্রতিবেদন:
শীতকাল এলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রবাসী পাত্র ও ঘটকদের আনাগোনা যেন বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত আছে—“শ্রীমঙ্গলের মেয়েরা নাকি সুন্দরী, স্মার্ট ও অতিথিপরায়ণ।”
স্থানীয় প্রবাদ-প্রচলিত সাহিত্যে এর উল্লেখও পাওয়া যায়। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘ছিলটে প্রচলিত পই-প্রবাদ ডাক-ডিঠান’ গ্রন্থে বলা হয়েছে:
“সাতগাঁও বালিশিরা, মাইঝে মাইঝে ছড়া, বেটি গুইন সুন্দর-সান্দর, বেটা গুইন মরা।”
অর্থাৎ এই অঞ্চলের মেয়েরা সুন্দরী ও সুগঠনা, আর ছেলেরা তুলনামূলকভাবে রোগা-পাতলা গড়নের।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যও এ অঞ্চলের মানুষের রূপ-গঠনে প্রভাব ফেলেছে বলে গবেষকেরা মনে করেন। পাহাড়-টিলা, চা–বাগান, হাওর-বিল আর বৈচিত্র্যময় জলবায়ুর কারণে এখানে শারীরিক গড়ন ও স্বভাব-চরিত্র দেশের অনেক স্থানের চেয়ে আলাদা।
শ্রীমঙ্গল শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত নয়, এখানে রয়েছে খাসিয়া, মণিপুরি, সাঁওতালসহ নানা আদিবাসী জনগোষ্ঠী। তাদের সংস্কৃতি ও রক্তের মিশ্রণও স্থানীয় মানুষের চেহারা ও আচার-আচরণে আলাদা বৈশিষ্ট্য যোগ করেছে বলে ধারণা করা হয়।
আঞ্চলিক গান, ধামাইল বা ডিঠানেও বারবার এসেছে শ্রীমঙ্গলের মেয়েদের সৌন্দর্যের উল্লেখ। এমনকি আশির দশকে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘বন্ধু’-তেও সিলেট অঞ্চলের মেয়েদের রূপের প্রশংসা পাওয়া যায়।
সব মিলিয়ে শ্রীমঙ্গল শুধু প্রকৃতির নয়, মানুষ ও সংস্কৃতিরও এক অনন্য মিলনক্ষেত্র। এখানকার মেয়েদের নিয়ে প্রচলিত ‘সুন্দরী’ খ্যাতি তাই লোকস্মৃতির বাইরেও এক ধরনের সামাজিক বাস্তবতা হয়ে উঠেছে।