পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনা ঘটে ভেনেজুয়েলার একটি তেলবাহী জাহাজ আটক করার কয়েক দিনের মধ্যেই। এই হামলা লাতিন আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি সাউদার্ন কমান্ড (সাউথকম) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ-এর নির্দেশে তিনটি জাহাজে ‘মারাত্মক কাইনেটিক স্ট্রাইক’ চালানো হয়েছে।
সাউথকমের পোস্ট অনুযায়ী, প্রথম জাহাজে ৩ জন, দ্বিতীয় জাহাজে ২ জন এবং তৃতীয় জাহাজে ৩ জন নিহত হয়েছেন। যদিও নিহতদের মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার দাবি করা হলেও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, সেপ্টেম্বর থেকে ভেনেজুয়েলার কাছাকাছি প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবীয় সাগরে মার্কিন বাহিনীর এই ধরনের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। তারা এসব ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে অভিহিত করেছেন।
মার্কিন কংগ্রেসের কয়েকজন আইনপ্রণেতা প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষ করে সেপ্টেম্বরের প্রথম হামলার পর বেঁচে যাওয়া দুজনের ওপর দ্বিতীয় দফা হামলার নির্দেশ তিনি ব্যক্তিগতভাবে দিয়েছিলেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
পেন্টাগন দাবি করেছে, মাদক পাচার রোধের অংশ হিসেবে ক্যারিবীয় সাগর ও মেক্সিকো উপসাগরে যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন, ড্রোন এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হয়েছে।
ভেনেজুয়েলা এই হামলা ও সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধিকে তীব্র ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ভেনেজুয়েলার অগাধ তেল ও গ্যাস সম্পদ লুটের উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এদিকে, ভেনেজুয়েলার কাছাকাছি অবস্থিত ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের বিমানবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। দেশটি জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহে মার্কিন সামরিক বিমানগুলো লজিস্টিক কার্যক্রম, সরবরাহ পুনঃভরাট এবং সেনা সদস্যদের রোটেশনের জন্য বিমানবন্দর ব্যবহার করবে।
ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর প্রধানমন্ত্রী কামলা প্রসাদ-বিসেসার মন্তব্য করেছেন, তিনি মাদক পাচারকারীদের ‘টুকরো টুকরো হয়ে যেতে’ দেখার পক্ষপাতী, নাগরিকদের ওপর হামলার পরিবর্তে।
উত্তরে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ঘোষণা দিয়েছেন, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোতে দেশের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হবে, যা তাদের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল টেলেসুর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

