ভারতের বিহার রাজ্যের স্তন্যদানকারী মায়েদের বুকের দুধে অতি সামান্য মাত্রায় ইউরেনিয়াম সনাক্ত হওয়ায় উদ্বেগ তৈরি হলেও, ভারতের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) সদস্য ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. দিনেশ কে আসওয়াল জনসাধারণকে দুশ্চিন্তা না করার আশ্বাস দিয়েছেন।
রোববার (২৩ নভেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. দিনেশ কে আসওয়াল জানান, গবেষণায় যে মাত্রার ইউরেনিয়াম পাওয়া গেছে, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদিত নিরাপদ মাত্রার তুলনায় অনেক কম এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি করবে না।
পাটনা মহাবীর ক্যানসার সংস্থা ও গবেষণাকেন্দ্র, লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটি এবং দিল্লির এইমস-এর বিজ্ঞানীরা বিহারে যৌথভাবে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন, যা ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’এ প্রকাশিত হয়েছে।
সনাক্তকৃত মাত্রা: গবেষণায় দেখা গেছে, বিহারের মায়ের বুকের দুধের নমুনায় সর্বোচ্চ ৫ পিপিবি (পার্টস পার বিলিয়ন) ইউরেনিয়াম (ইউ-২৩৮) পাওয়া গেছে।
নমুনার সংখ্যা: মোট ৪০ জন স্তন্যদানকারী মায়ের দুধ পরীক্ষা করা হয় এবং সব নমুনাতেই ইউরেনিয়াম পাওয়া গেছে।
ঝুঁকি পর্যালোচনা: গবেষণার সহলেখক ও দিল্লি এইমসের ড. অশোক শর্মা জানান, প্রায় ৭০ শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রে সম্ভাব্য নন-কার্সিনোজেনিক ঝুঁকি দেখা গেছে। তবে তিনি নিশ্চিত করেন যে এই মাত্রা অনুমোদিত সীমার নিচে থাকায় বাস্তবে এর প্রভাব খুবই কম হওয়ার কথা।
ড. আসওয়াল স্পষ্ট করে বলেন, পানিতে ইউরেনিয়ামের ডব্লিউএইচও নিরাপদ সীমা হলো ৩০ পিপিবি, যা বিহারের নমুনায় পাওয়া মাত্রার ছয় গুণ।
ড. আসওয়াল এবং ড. অশোক শর্মা দুজনেই জোর দিয়ে বলেছেন যে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই এবং মায়েদের অবশ্যই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে।
ড. আসওয়াল বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, স্বাভাবিকভাবেই পৃথিবীর মাটিতে অতি ক্ষুদ্র মাত্রায় ইউরেনিয়াম থাকে। এছাড়া মায়েরা যে ইউরেনিয়াম গ্রহণ করেন, তার বেশিরভাগই প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, বুকের দুধে পৌঁছায় মাত্র সামান্য অংশ।
মহাবীর ক্যানসার সংস্থা ও গবেষণাকেন্দ্রের গবেষক ড. অরুণ কুমার জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভূগর্ভস্থ পানিতে ইউরেনিয়াম দূষণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করেছে। ভারতে ১৮টি রাজ্যের ১৫১টি জেলায় ভূগর্ভস্থ পানিতে ইউরেনিয়াম দূষণের খবর পাওয়া গেছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, মায়েদের দুধে ইউরেনিয়ামের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হওয়ায় সেসব অঞ্চলে ব্যাপক বায়ো মনিটরিং জরুরি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, মায়ের বুকের দুধের অগণিত উপকারিতা সামান্য পরিবেশগত এক্সপোজারের ঝুঁকির চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।







