বাংলাদেশের খাদ্যসংস্কৃতিতে আমের স্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গ্রীষ্মকালীন এই ফলকে অনেকেই বলেন “ফলের রাজা”—সে তার স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণের জন্য। হিমসাগর, গোপালভোগ, ফজলি, ল্যাংড়া বা আম্রপালির মতো জাতগুলো দেশের নানা অঞ্চলে জনপ্রিয় হলেও, বাজারে গিয়ে ভালো মানের আম বেছে নেওয়া সহজ কাজ নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু সহজ লক্ষণ অনুসরণ করলে পাকা, সুস্বাদু ও নিরাপদ আম চেনা সম্ভব।
১. আমের জাত বুঝে কিনুন
আমের স্বাদ, গন্ধ ও টেক্সচার জাতভেদে ভিন্ন হয়। রস খাওয়ার জন্য হিমসাগর উপযুক্ত, রান্নার জন্য ফজলি, আর সরাসরি খাওয়ার জন্য গোপালভোগ বেশ জনপ্রিয়। বাজারে যাওয়ার আগে স্থানীয় জাত ও মৌসুমি প্রাপ্যতা সম্পর্কে ধারণা রাখা ভালো। প্রয়োজনে বিক্রেতার কাছ থেকে জাত সম্পর্কে জেনে নিন।
২. ঘ্রাণে ধরুন আসল পাকা
পাকা আমের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য চিহ্ন হলো তার ঘ্রাণ। ডাঁটার কাছে যদি মিষ্টি ও তীব্র ঘ্রাণ পাওয়া যায়, তবে সেটি স্বাভাবিকভাবে পাকা। গাঁজন বা টক গন্ধ থাকলে আমটি অতিপাকা বা নষ্ট হয়ে থাকতে পারে। রাসায়নিকে পাকানো আমে ঝাঁঝালো গন্ধ থাকতে পারে, যা সহজেই বোঝা যায়।
৩. হালকা চাপে বুঝুন অবস্থা
হাতে নিয়ে হালকাভাবে চাপ দিলে পাকা আম কিছুটা নরম অনুভব হবে। কাঁচা আম শক্ত থাকবে, আর অতিরিক্ত নরম হলে সেটি খাওয়ার অনুপযুক্ত। খোসায় সামান্য দাগ স্বাভাবিক, তবে কুঁচকে যাওয়া বা ডগার অংশ শুকিয়ে যাওয়া আম এড়িয়ে চলুন।
৪. রঙ নয়, ঘ্রাণ ও গঠনে রাখুন ভরসা
সব জাতের আম পাকলে হলুদ হয় না। যেমন, ল্যাংড়া বা ফজলি পাকা হলেও রঙ সবুজই থাকে। তাই শুধুমাত্র রঙ দেখে নয়, ঘ্রাণ ও টেক্সচার দিয়ে আমের পরিপক্বতা যাচাই করা ভালো। অতিরিক্ত চকচকে বা অস্বাভাবিক রঙের আম কৃত্রিমভাবে পাকানো হতে পারে।
৫. মৌসুমে ও নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে কিনুন
মে থেকে জুলাই—এই সময়টাই দেশীয় আমের প্রকৃত মৌসুম। এ সময়েই রাসায়নিকমুক্ত ও স্বাভাবিকভাবে পাকা আম পাওয়া সহজ। মৌসুমের বাইরে কেনা আমে স্বাদ ও গুণমান থাকে না, বরং ক্ষতিকর উপায়ে পাকানো হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই পরিচিত, বিশ্বস্ত বিক্রেতা বা নির্ভরযোগ্য অনলাইন উৎস বেছে নিন।
এই গ্রীষ্মে বাজারে যাওয়ার আগে মনে রাখুন—ভালো আম শুধু রসনায় নয়, চর্চা ও সচেতনতায়ও নির্ভর করে। সঠিক পদ্ধতিতে বাছাই করা আমই আপনার টেবিলে এনে দেবে প্রকৃত গ্রীষ্মের স্বাদ।