সন্ধ্যা নদী থেকে নিখোঁজ ট্রলার চালকের ৮ দিনেও সন্ধান মেলেনি – স্বজনদের দাবী চাঁদাবাজদের সাথে বিরোধ।
উজিরপুর বরিশাল প্রতিবেদকঃ বরিশালের উজিরপুরের সন্ধ্যা নদী থেকে নিখোঁজ ট্রলার চালক মাহাবুব হাওলাদারের সন্ধান ৭ দিনও দিতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন। নিখোঁজ মাহবুবের বড় ভাই জামাল হোসেন হাওলাদার জানান, বিগত পাঁচ আগস্ট এর পরে স্থানীয় প্রভাবশালী দুই ব্যক্তি তার ট্রলার বন্ধ করে রাখেন এবং নিয়মিত গোপন মাশহারার বিনিময়ে ট্রলার চালানোর অনুমতি পায় মাহবুব। আর এই নিয়মিত মাশহারা পরিশোধ না করার কারণেই তাকে অপহরণের শিকার হতে হয়েছে। দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত ট্রলার চালিয়ে আসছে মাহবুব উজিরপুর বাবুগঞ্জ এ দুই পারে তার সাথে কারো সাথে বিরোধ নাই। গত ৫ই আগস্টের পরে দুই প্রভাবশালীর রোষানলের শিকার একই সাথে সামনে ঘাটের ইজারা আনতে এ প্রভাবশালীদের অন্যায় আবদার বিরোধিতা করায় কাল হয়েছে আমার ভাইয়ের।ইজারা পেতে মরিয়া হয়ে আমি ও আমার ভাইকে একটি পক্ষ অনবরত চাপ প্রয়োগ করতেন। আমি জীবনের ভয়ে এ বছর ইজারা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেও পথের কাঁটা হিসেবে একমাত্র অবশিষ্ট ছিল আমার ভাই মাহবুব। আর এই কারণেই অপহরণের ঘটনা ঘটতে পারে।

তবে পুলিশকে বিষয়টি জানানোর পরে পুলিশ অদৃশ্য কারণে তাদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।নিখোঁজ মাহবুবের বোন রুনা বলেন, চাঁদাবাজরা নিয়মিত চাঁদা না পেয়ে কৌশলে আমার ভাইকে অপহরণ করে গুম করেছে। এ বিষয়ে পুলিশকে বারবার বলা সত্ত্বেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
এতে আমরা পরিবারসহ আতঙ্কে আছি। অপরদিকে চালক অপহরণের ঘটনায় ট্রলার শ্রমিকেরা অনির্দিষ্টকালের জন্য পারাপার বন্ধ করে দিয়েছেন।এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে উজিরপুর বাবুগঞ্জের হাজার হাজার এলাকাবাসী। ক্ষতি শিকার হচ্ছে কৃষক ও কৃষি ফসলের। নিখোঁজের সন্ধানে মানববন্ধন করেছে বাবুগঞ্জ উপজেলার রাহুত কাঠী বাজার ব্যবসায়ী সমিতি ও এলাকাবাসী।
৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে দশটায় বাবুগঞ্জ উপজেলার ০৩ নং দেহেরগতি ইউনিয়নের রাহুতকাঠী বাজার ব্যবসায়ী সমিতি, স্বজন ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনামুল হক খান এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য এ বি এম মোস্তাফিজুর রহমান ফারুক, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক রকিবুল হাসান খান, উজিরপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহফুজুর রহমান মাসুম, নিখোঁজ মাহবুবের বড় ভাই মোঃ জামাল হোসেন, বক্তারা বলেন ৫ আগস্ট এর পর থেকে একদল মৌসুমী চাঁদাবাজ, কিশোর গ্যাং, দখলবাজ সন্ত্রাসীরা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিভিন্ন প্রকার অগ্নিসংযোগ অপহরণ গুম এর মত জঘন্য অপকর্মের জড়িত হয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে, তারই ধারাবাহিকতায় মাহবুবকে ওই চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা কৌশলে ট্রলারসহ অপহরণ করে গুম করে রেখেছে। তাই পুলিশ প্রশাসনকে অপহরণের শিকার মাহবুবকে খুঁজে পাওয়ার দাবী করেন। যুবদল নেতা রকিবুল হাসান বলেন, একদল চাঁদাবাজ বিএনপির সাথে মিশে একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে দলের উপরে দায়ের চাপের চেষ্টা করছেন। তাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে, একই সাথে এ সকল মৌসুমী চাঁদাবাজার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।
উজিরপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বলেন, দেশের মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চায়, সবাইকে দখলবার চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এ বিষয়ে পুলিশকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। ঘাটের ইজারাদার ও নিখোঁজ মাহবুবের ভাই জামাল হোসেন বলেন তার ভাইকে খোঁজ না দেওয়া পর্যন্ত টলার বন্ধ থাকবে। উল্লেখ্য বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার মুন্ডপাশা গ্রামের ট্রলার চালক মাহাবুব হাওলাদারকে বাবুগঞ্জ-উজিরপুর সন্ধ্যা নদী থেকে ৩১ জানুয়ারী রাত দশটার দিকে রাহুতকাঠী ঘাট থেকে শিকারপুর আসার পথে পথিমধ্যে ট্রলার সহ নিখোঁজ হন। তারপর গত ৮ দিনও তার সন্ধান মেলেনী। তিনি উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মুন্ডপাশা গ্রামের সেকান্দার হাওলাদারের ছেলে। স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাহাবুল হাওলাদার শিকারপুর খেয়াঘাটে নিয়মিত পারাপারের জন্য ট্রলার চালাতেন। ঘটনার দিন ৩১জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ৮ থেকে ১০ জন তরুণ ও কিশোর যাত্রী তার ট্রলারে ওঠে। নদীর মাঝখানে পৌঁছালে হঠাৎ চিৎকার শোনা যায়। তবে আশপাশে অন্য কোনো ট্রলার না থাকায় কেউ সাহায্য করতে কেহ আসেনি।
নদীর পাড়ে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদ ও সজনদের ধারণা পূর্ব শত্রুতার জেরে ও পূর্বের চাঁদাবাজদের কে চাঁদা না দেওয়ার কারণে পরিকল্পিতভাবে তাকে অপহরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাবুগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী ও পরে নিয়মিত একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে উভয় থানার পুলিশ অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অপরদিকে নিখোঁজ মাহবুবের ভাই জামাল হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের কে বলেন আমার ভাইয়ের অপহরণকারীদের কে গ্রেফতার করতে না পারলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করা হবে। উজিরপুর মডেল থানা পুলিশ এর অফিসার ইনচার্জ আব্দুস সালাম বলেন বাবুগঞ্জ থানা পুলিশ ও উজিরপুর থানা পুলিশ যৌথ ভাবে উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
মোঃ মাহফুজুর রহমান(মাসুম)
উজিরপুর বরিশাল প্রতিবেদক
০১৭১২৬০৩৮৯৩