কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক বন্দুক হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর অঞ্চলজুড়ে নতুন করে উত্তেজনার আগুন জ্বলে ওঠে। এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় দিল্লি। এরপর ইসলামাবাদও ড্রোন হামলার মাধ্যমে জবাব দেয়।
চলমান উত্তেজনার মধ্যেই অবশেষে শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই চিরবৈরী প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান। তবে এই শান্তি কতটা স্থায়ী হবে—সেটি নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা। কারণ, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উভয় দেশের পক্ষ থেকে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে জানান, তাঁর এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ৪৮ ঘণ্টার টানা প্রচেষ্টায় ভারত ও পাকিস্তান তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশ একটি নিরপেক্ষ স্থানে আলোচনা শুরু করতে চেয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
যদিও দুই দেশের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির চিত্র তুলে ধরায় পরস্পরবিরোধী ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে, তবে বিশেষজ্ঞদের কাছে তা বিস্ময়ের কিছু নয়। হাডসন ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক ড. অপর্ণা পান্ডে মনে করেন, ভারত সাধারণত কোনো বৈদেশিক মধ্যস্থতা মেনে নেয় না, তারা চায় প্রতিপক্ষ সরাসরি তাদের সঙ্গে কথা বলুক। অন্যদিকে পাকিস্তান বরাবরই আন্তর্জাতিক চাপ ও সমর্থন চেয়েছে।
বন্দুক হামলার পর একে অপরের ভূখণ্ডে চার দিনের লাগাতার হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যেই এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা আসে, যা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল। শনিবার ভোরেও পাকিস্তান দাবি করে, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসলামাবাদসহ অন্তত কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি যুদ্ধবিরতির পরও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিকবার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন। পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ তুলেছে। তবে ইসলামাবাদ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—তারা শান্তি বজায় রাখার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এদিকে হামলার প্রতিশোধ হিসেবে উভয় দেশ যে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো এখনও বহাল রয়েছে। যেমন, ভিসা স্থগিত, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধ এবং ভারতের তরফে একটি পানিবণ্টন চুক্তি থেকে সরে আসা। এখনো পরিষ্কার নয়, যুদ্ধবিরতির পর এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে কি না।
সুতরাং, যুদ্ধবিরতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু টিকে থাকবে কি না—তা সময়ই বলে দেবে। এই অঞ্চলের মানুষ এখন তাকিয়ে আছে শান্তির পরবর্তী ধাপে।