লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুর জেলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সাধারণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এ তথ্য বিবরণী পাওয়া কষ্টসাধ্য। নানা হয়রানি, বাধা, প্রয়োজনীয় কাগজ থাকার পরও সঠিক সময় পাসপোর্ট না পাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে থাকে।
তবে সেখানে সক্রিয় দালাল চক্রের কারো গোপন ইঙ্গিত থাকলে যতো ত্রুটিই থাকুক পাসপোর্ট পেতে কষ্ট হয় না ।
জানা গেছে, আঞ্চলিক এ পাসপোর্ট অফিসে দালাল ভরা। রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর, রামগতি, চন্দ্রগঞ্জ ও সদরসহ প্রায় একশ পঞ্চাশ জন দালাল নিয়ন্ত্রণ করছে লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। তাদের সঙ্গে যোগসাজশ না করলে অল্প সময়ে পাসপোর্ট পাওয়া যায় না।
দালালের গোপন সংকেত থাকলে কোনো হয়রানি হতে হয় না, লাইনে ধরার ঝক্কি-ঝামেলা থাকে না। এতে পাসপোর্ট গ্রহীতাদের এ জন্য খরচ করতে হয় বাড়তি টাকা। কোনো কোনো পাসপোর্ট বাবদ চল্লিশ টাকা নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাধারণ মানুষ দালালের কাছ থেকে সুবিধা পেলেও তাদের দাবি, এসব অসাধুদের কারণেই লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সরাসরি পাসপোর্ট করা কষ্টসাধ্য। তারা বেশি অর্থের লোভে অফিসের ভেতরকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট গড়েছেন। যে কারণে, কারও সব সঠিক কাগজপত্র থাকলেও হয়রানির শিকার হতে হয়।
সাধারণরা দালাল নিয়ে অভিযোগ করলেও লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী পরিচালক এসএম জাকির হোসেন বলছেন উল্টো কথা। তার দাবি, এ অফিসে কোনো দালাল নেই। কেউ হয়রানিরও শিকার হচ্ছেন না।
কিন্তু তার দাবির যে সত্যতা নেই সেটি সম্প্রতি প্রমাণ করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব-১১) অভিযানিক একটি দল। র্যাব-১১ নোয়াখালীর সদস্যরা লক্ষ্মীপুর পাসপোর্ট অফিসের আশপাশ এবং সদরের বিভিন্ন এলাকায় দালাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে চক্রের ১২ জন সক্রিয় সদস্যকে আটক করেছে।
সেদিনই বিকেলে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে তথ্য দেয় নোয়াখালী র্যাব-১১। আটকরা হলেন, শাকিল আল মাহমুদ (২৭), মো. তপু হোসেন (২৪), রাশেদ আলম (২২), মো. শাহিন (২৮), মো. কামাল (৬৩), মো. জাকির হোসেন (২৩), মো. ইকবাল হোসেন (১৯), ফজলুল করিম (২২), মো. জাহিদ ইসলাম (১৯), বেলায়েত হোসেন (৩৩), মো. নোমান সিদ্দিক (৪৭), মোরশেদুল আলম (৩৪)।
র্যাব জানায় আটক এসব দালাল সদস্য সাধারণ লোকজনের কাছ থেকে পাসপোর্ট বানিয়ে দেওয়ার কথা বলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিত। পাসপোর্ট অফিসের আশপাশ এলাকায় সিন্ডিকেট গড়ে নিজেদের অসাধু কার্যক্রম পরিচালনা করতো।
নোয়াখালী র্যাব-১১ কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান স্বাক্ষরকৃত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দালাল চক্রের সিন্ডিকেটের কারণে জনসাধারণ পাসপোর্ট করতে গিয়ে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়, শিকার হন নানা প্রতারণার। র্যাব কর্তৃক দালালচক্র বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে পরিচালিত এ অভিযান থেকেই চক্রের সক্রিয় ১২ সদস্যকে আটক করা হয়।
র্যাবের বিশেষ আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে লক্ষ্মীপুর জেলা সদর থানা এলাকার এ চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে নগদ ৮০ হাজার ২০ টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, ১৮টি পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র জব্দ করেছে।
দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। আটকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান মাহমুদুল হাসান।
পরে দালাল ও সিন্ডিকেটের বিষয়টি নিয়ে লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী পরিচালক জাকিরের সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিক সংগঠন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রিন্ট মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এর নেতৃবৃন্দ। তিনি বলেন- ‘আমার অফিসে দালাল নেই, কেউ হয়রানিরও শিকার হচ্ছেন না- তার এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন করলে জাকির বলেন, কয়েকজন দালাল আটক হওয়ার বিষয়টি শুনেছি। তবে দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট করাতে হয় আমি জানতাম না। বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি।’
এ সময় দালাল বা বহিরাগত কোনো লোক আমাদের অফিসে ঢুকতে পারেন না বলে ফের দাবি করেন তিনি। আরও বলেন, অফিসের বাইরে যদি কিছু হয় সেটার দায়-দায়িত্ব আমাদের না। বাইরের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই।
দালালদের কাছ থেকে আট পাসপোর্ট ও পাসপোর্ট স্লিপ জব্দের বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি এ কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কিভাবে তাদের হাতে পাসপোর্ট গেল সেটাও আমি বলতে পারবো না। আমাদের অফিসের কেউ যদি কোনো অনিয়মে জড়িত থাকে আমি ব্যবস্থা নেব। এখানে আমি এসেছি এখনো এক বছর হয়নি।
বিষয়টি সম্পর্কে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গেও কথা হয়েছে। তিনি বলেন-‘ যদি কোনো অভিযোগ আসে, তাহলে আমি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু অফিসের বাইরের কোনো বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না।’