মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটেছে এবং মধ্যপ্রাচ্য এখন ‘স্বাভাবিক অবস্থায়’ ফিরতে চলেছে। তার দাবি, যুদ্ধ শেষ হওয়ায় এখন বিশ্বনেতারা শান্তির পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন, আর ইসরায়েল হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
রোববার (১২ অক্টোবর) ওয়াশিংটন থেকে ইসরায়েলগামী এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “জেনে রাখুন, যুদ্ধ শেষ।”
এই শান্তি চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “তিন হাজার বছরের মধ্যে এই প্রথম ইহুদি, মুসলিম ও আরব দেশগুলো একসঙ্গে রাস্তায় নেমে আনন্দ উদযাপন করছে। এই চুক্তির মাধ্যমে একসময়ের কট্টর শত্রুরাও আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।”
ট্রাম্প জানান, মিশর ও সৌদি আরবসহ আঞ্চলিক শক্তিধর দেশগুলো এ চুক্তিকে সমর্থন করেছে। তার ভাষায়, “মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যুদ্ধ দেখে ক্লান্ত। এই শান্তি সবার জন্য দারুণ ফল বয়ে আনবে।”
তিনি আরও জানান, গাজার পুনর্গঠন দ্রুত শুরু হবে। তবে এলাকা বর্তমানে ‘ধ্বংসস্তূপে’ পরিণত হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। প্রাথমিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা অপসারণ ও মৌলিক সেবা পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হবে।
ট্রাম্প বলেন, খুব শিগগিরই ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি নতুন আন্তর্জাতিক শান্তি পর্ষদ গঠন করা হবে। এতে যোগদানের আগ্রহ দেখিয়েছেন বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতা। সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে তিনি সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নামও উল্লেখ করেন।
হামাসের বিষয়ে ট্রাম্প জানান, গোষ্ঠীটি এখন একটি স্থানীয় পুলিশ বাহিনী গঠন শুরু করেছে, এবং যুক্তরাষ্ট্র ‘শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে’ সেই উদ্যোগে সাময়িক অনুমোদন দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, “এই মুহূর্তে তিনিই সঠিক ব্যক্তি।”
ট্রাম্প দাবি করেন, তার নেতৃত্বে ইসরায়েল-হামাস সংঘাতসহ এখন পর্যন্ত আটটি যুদ্ধের অবসান ঘটেছে।
রোববার পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধবিরতি টানা তৃতীয় দিনের মতো কার্যকর ছিল। সোমবার ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে ট্রাম্পের ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উত্তর গাজায় ফিরে যাচ্ছেন। তাদের আশা, এই যুদ্ধবিরতি শেষ পর্যন্ত স্থায়ী শান্তির পথে নিয়ে যাবে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, “আগামীকাল একটি নতুন পথের সূচনা— বিনির্মাণের পথ, নিরাময়ের পথ।”
ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র সাশা বেড্রোসিয়ান জানান, সোমবার ভোর থেকে জিম্মিদের মুক্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে। জীবিত ২০ জন জিম্মিকে একসঙ্গে মুক্তি দেওয়া হবে এবং বাকি ২৮ জন মৃত জিম্মির দেহাবশেষ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
হামাসের পক্ষ থেকে সোমবার দুপুরের মধ্যে সব জিম্মি মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে। ইসরায়েলের জিম্মি সমন্বয়কারী গাল হির্শ বলেন, যেসব মৃত জিম্মির দেহাবশেষ এখনো উদ্ধার হয়নি, তাদের সন্ধানে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।
গাজায় ফিরে আসা ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছেন, তারা অবিশ্বাস্য ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হয়েছেন। উদ্ধারকর্মীরা সতর্ক করেছেন, এলাকায় এখনো অবিস্ফোরিত বোমা ও গোলা রয়েছে।
স্থানীয় সাহায্য সংস্থার কর্মকর্তা আমজাদ আল শাওয়া বলেন, প্রায় ১৫ লাখ বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীর জন্য অন্তত তিন লাখ তাবুর প্রয়োজন।
৩৭ বছর বয়সী রামি মোহাম্মদ আলি, যিনি দেইর আল বালাহ থেকে ছেলের সঙ্গে পায়ে হেঁটে গাজা সিটিতে ফিরেছেন, বলেন, “যে ধ্বংস আমরা দেখেছি, তা বিশ্বাস করা কঠিন। আমরা গাজায় ফিরে আনন্দিত, কিন্তু এই ধ্বংস দেখে মন তিক্ততায় ভরে গেছে।”