চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের রায় ঘোষণার দিন জানা যাবে আগামী ১৩ নভেম্বর।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারক হলেন মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষ পাঁচ দিন ও আসামিপক্ষ তিন দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। বহুল আলোচিত এ মামলায় পাঁচটি অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে প্রসিকিউশন। অন্যদিকে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীরা তাদের খালাস চেয়েছেন এবং রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনেরও খালাস দাবি করা হয়েছে।
রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের আগে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আসামিপক্ষের যুক্তির জবাব দেন। একই সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আবেদন জানান।
মামলার শুনানিতে প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এসএইচ তামিমসহ একাধিক প্রসিকিউটর। অন্যদিকে পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন, আর রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন শহীদ আবু সাঈদের পিতা ও অন্যান্য স্বজনসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী। ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জুলাই আন্দোলনের নেতা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
উল্লেখ্য, ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়। পরবর্তীতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হন এবং ঘটনার সত্যতা তুলে ধরেন।
এই মামলার পাশাপাশি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন—একটি আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ মেয়াদে সংঘটিত গুম-খুনের অভিযোগে, আরেকটি ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ সরকার ও তার অনুগত বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে এসব মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে।