রাঙামাটির পাহাড়ি জনপদের জুম চাষের মৌসুম এখন পুরো শীর্ষে। পাহাড়ি চাষিরা সোনালি ধান ও বিভিন্ন সাথী ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত। মাঠে ফসলের হাসি, ঘরে উৎসবের আনন্দ—এ যেন একসাথে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে পাহাড়।
গত বছরের তুলনায় এবারের ফলন সন্তোষজনক, কারণ আবহাওয়া ছিল চাষের জন্য উপযোগী। জেলার বিভিন্ন স্থানে পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে, আর যারা এখনো ফসল তুলেননি, তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
প্রতিবছর ফাল্গুন-চৈত্রে পাহাড় পরিষ্কার করে জুম চাষের প্রস্তুতি শুরু হয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে পাহাড়ে গর্ত করে ধান, মারফা, কুমড়া, তুলা, তিল, আদা, ভুট্টাসহ নানা ধরণের সাথী ফসল রোপণ করা হয়। রোপণের তিন মাস পর ভাদ্র মাসে শুরু হয় ফসল তোলার ব্যস্ততা, যা অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চলে।
মগবান ইউনিয়নের মোরঘোনা এলাকার জুমচাষি বিপুল চাকমা বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে ফলনও ভালো হচ্ছে। উন্নত জাতের বীজ পেলে ফলন আরও দ্বিগুণ হতো।”
বড়গাঙ এলাকার চাষি মঙ্গল চাকমা জানান, “গত বছর ২০ কেজি ধান রোপণ করে ৪–৫ বস্তা পেয়েছিলাম। এবার আশা করছি আরও বেশি হবে।”
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলার ৭,৬৪৮ হেক্টর জমিতে জুম ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৫,৭৩৬ হেক্টরের ফসল ইতোমধ্যে ঘরে তোলা হয়েছে, অর্থাৎ প্রায় ৭০% জমির ফসল সংগ্রহ শেষ পর্যায়ে।
উপপরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, “আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার ধানের পাশাপাশি অন্যান্য সাথী ফসলের উৎপাদনও সন্তোষজনক। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ ও উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ করলে জুমিয়ারা অধিক ফলন পাবেন এবং বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির সুযোগও তৈরি হবে। একই জমিতে সারা বছর চাষ করলে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথও উন্মুক্ত হবে।”