“জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থেকেছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ ইরান। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত তেহরানের এই সিদ্ধান্ত কূটনৈতিক মহলে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।”
“ঘটনাটি ঘটে ১২ সেপ্টেম্বর, যখন সৌদি আরব ও ফ্রান্স ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’ নামে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে। এতে ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার পাশাপাশি, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমে অঞ্চলটি শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনার প্রস্তাব রাখা হয়। ভোটাভুটিতে ১৪২ দেশ পক্ষে দাঁড়ায়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, আর্জেন্টিনা ও হাঙ্গেরিসহ ১০টি দেশ বিপক্ষে ভোট দেয়। এছাড়া, ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান, তিউনিসিয়া ও ভেনেজুয়েলাসহ ১২টি দেশ ভোটে অংশগ্রহণ করে না।”
“ইরানের মূল আপত্তি ছিল দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে বৈধতা দেওয়া। তেহরানের মতে, ইসরায়েল একটি দখলদার রাষ্ট্র। তাকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে হলো ফিলিস্তিনিদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। তাই ইরান ভোটে বিরত থাকে। বরং ইরান দীর্ঘদিন ধরে একক রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে, যেখানে ফিলিস্তিনের মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি অধিবাসীরা গণভোটের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র নির্ধারণ করবে।”
“ইরানের কূটনৈতিক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’ বাস্তব সমস্যার মূল কারণ এড়িয়ে গেছে। এতে দখলদার ইসরায়েলকে আড়াল করা হয়েছে এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনকে অবহেলা বা নিন্দা করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ—দায় ভাগাভাগি এমনভাবে দেখানো হয়েছে যেন ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয়ই সমানভাবে দায়ী, অথচ বাস্তবে পশ্চিমা সমর্থনে ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে দখল, গণহত্যা এবং বৈষম্য চালাচ্ছে।”
“ইরানের মতে, ঘোষণায় আত্মরক্ষার অধিকার উপেক্ষা করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রতিরোধকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, অথচ ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলার ঘটনা আড়াল করা হয়েছে। পাশাপাশি, ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান তাদের অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে দেবে। এমনকি ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামোয় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, যা ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনধিকারচর্চা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।”
“নিউইয়র্ক ঘোষণা সাত পাতার একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। এতে গাজার ওপর ইসরায়েলের হামলা, অবরোধ ও অবকাঠামো ধ্বংসের নিন্দা করা হয়েছে। কিন্তু হামাসের ৭ অক্টোবরের অভিযানের সমালোচনা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আছে একটি অস্থায়ী শান্তিরক্ষী মিশন, যাতে আরব ও ইউরোপীয় দেশগুলো অংশ নেবে। কিন্তু ইরান মনে করে, এটি ফিলিস্তিনের মৌলিক অধিকারের রক্ষায় যথেষ্ট নয়।”
“বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের বিরত থাকা তাদের নীতিগত অবস্থানের অংশ। তেহরান এখনও মনে করে, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান ফিলিস্তিনের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ। বরং এটি দখলদারিত্বকে বৈধতা দেয়। তাই ফিলিস্তিনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হয়েও তারা ভোটে অংশ নেয়নি, যা তাদের দীর্ঘমেয়াদি একক রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কৌশলকে সামনে আনে।”