সাইফুল ইসলাম, বাউফল প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর বাউফলের আলোচিত সেই বকটিকে অবশেষে অবমুক্ত করা হয়েছে। তবে অবমুক্তির পর থেকেই বকটি কিছু না খেয়ে স্থির দাঁড়িয়ে আছে বলে জানান স্থানীয়রা।
গতকাল দুপুর ২টার দিকে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বাউফল উপজেলার সূর্যমনি ইউনিয়নের নুরাইনপুর বাজার এলাকায় অবস্থিত ‘বকের বাড়ি’ নামে পরিচিত গাছটিতে বকটিকে অবমুক্ত করা হয়।
জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে ‘বকের বাড়ি’ নামে পরিচিত নুরাইনপুর বাজার সংলগ্ন খানবাড়ির একটি জায়গায় চার মাস আগে ঝড়ের সময় একটি বকের ছানা পড়ে যায়। তখন একটি গুইসাপ সেটিকে আক্রমণ করলে স্থানীয় ব্যবসায়ী হেমায়েত উদ্দিন এগিয়ে এসে সেটিকে উদ্ধার করেন। এরপর পরিচর্যা করে নিজের সন্তানের মতো বকের ছানাটিকে সুস্থ করে তোলেন তিনি।
পরে বকটি হেমায়েত উদ্দিনের সঙ্গে তার দোকানে বসবাস করে আসছিল। দোকানদারের সঙ্গে বকের এমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়।
বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে এলে বন বিভাগ ও প্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তারা হেমায়েত উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা জানান, বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনের আওতায় কোনো বন্য পাখিকে দীর্ঘদিন গৃহপালিত অবস্থায় রাখা যায় না। তাই পাখিটি অবমুক্ত করা হয়।
অবমুক্তির পর থেকেই বকটি খাবারে অনীহা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের ভাষ্য, “বকটি যেন নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না। দোকানদার হেমায়েতের সঙ্গে তার যে সম্পর্ক ছিল, সেটির অভাব বোধ করছে।”
এ বিষয়ে দোকানদার মো. হেমায়েত উদ্দিন বলেন, আমি আইনকে শ্রদ্ধা জানাই। বন বিভাগের কর্মকর্তারা মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর আমার কাছে আসেন। আমি বকটিকে নিয়ে বাউফলে যাই। সেখানে অবমুক্ত করার চেষ্টা করলেও সেটি উড়তে চায়নি। পরে যেখান থেকে উদ্ধার করেছিলাম সেখানে নিয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের হাতে বকটিকে তুলে দেই। তারা সেটিকে অবমুক্ত করেন। যেখান থেকে পড়ে আহত হয়েছিল, ঠিক সেই গাছেই সেটিকে অবমুক্ত করা হয়। কিন্তু গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত বকটি কিছু খায়নি। আমার খুব কষ্ট লাগছে। আমার কাছে থাকলে নিয়মিত খাওয়াতে পারতাম। আরেকটু বড় হলে তখন অবমুক্ত করলে ভালো হতো।
বন বিভাগের কর্মকর্তা বদিউজ্জামান খান বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর আমি নুরাইনপুর ঘটনাস্থলে যাই। বকটি যেহেতু নির্দিষ্টস্থানে লালন-পালন করা হয়েছে, তাই অন্য কোথাও অবমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে ‘বকের বাড়ি’ নামে পরিচিত গাছটিতে বকটিকে অবমুক্ত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বকটি গতকাল থেকে কিছু খাইনি এ বিষয়ে আমি মিটিংয়ে আলোচনা করেছি। সমস্যা হচ্ছে বকটিকে নিয়ে লালন-পালনের কোনো সুযোগ নেই, এটি আইনে নিষিদ্ধ। গাছটির আশপাশে বকটির জন্য খাবারের রাখার ব্যবস্থার চেষ্টা করছি।







