জবি প্রতিনিধি,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন পরিচালিত প্রকল্পের শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের প্রোডাকশন’ বলে বিতর্কিত মন্তব্য করা ছাত্রদল নেতা ফরহাদ বিন বাসিতের অতীত রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে।
বর্তমানে ছাত্রদলের পদধারী এই নেতা একসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের কট্টর অনুসারী ছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ছাত্রদলে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ‘ছাত্র অধিকার পরিষদ’-এর রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।
গতকাল সোমবার রাতে আস-সুন্নাহ হলের শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ ট্যাগ দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফরহাদের পুরোনো ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, তিনি অতীতে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে তাকে নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন এবং নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক হিসেবে দাবি করেছেন। সামনে এল পুরোনো ‘মুজিব-ভক্তি’।
ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশটগুলোতে দেখা যায়, ফরহাদ বিন বাসিত ২০২১ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে তাকে ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ হিসেবে অভিহিত করে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ওই পোস্টে তিনি বঙ্গবন্ধুর একটি উদ্ধৃতি ব্যবহার করে তার রাজনৈতিক ত্যাগের প্রশংসা করেছিলেন।
এর আগে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ আরেকটি পোস্টে তিনি বঙ্গবন্ধুর ছবির সঙ্গে লিখেছিলেন, “বঙ্গবন্ধু! নামটা এমন এক ব্যক্তিকে ধারণ করে যার ব্যক্তিত্ব আমাকে মুগ্ধ করে। শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু, আপনার আদর্শ বুকে ধারণ করি সবসময়।”
ওই পোস্টে তিনি আরও লেখেন, “হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে লক্ষ কোটি বছর।”
রাজনৈতিক ভোলবদল: ছাত্রলীগ-ছাত্র অধিকার হয়ে ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র ও সহপাঠীদের দাবি, ফরহাদ বিন বাসিত নিজের সুবিধামতো রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন করেছেন। ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোর ভাষা ও ভাবভঙ্গি ছাত্রলীগের কর্মীদের মতো হলেও তিনি ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গঠিত ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ’-এর সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে তিনি ছাত্রদলে ভিড়ে যান এবং বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যপদ বাগিয়ে নেন।
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আস-সুন্নাহ হলের শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ বলা এবং হুট করে ছাত্রদলের কট্টর নেতা বনে যাওয়া ফরহাদের এমন ভোলবদলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, যারা একসময় ‘মুজিব আদর্শ বুকে ধারণ’ করার কথা বলত, তারাই এখন নিজেদের আখের গোছাতে ছাত্রদলে অনুপ্রবেশ করে সাধারণ ও ধর্মপ্রাণ শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ বা ‘শিবির’ ট্যাগ দিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, “যিনি ২০২১ সালেও বঙ্গবন্ধুকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মেনে পোস্ট দিতেন, তিনি ২০২৫-এ এসে ছাত্রদলের নাম ভাঙিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হচ্ছেন। এগুলো মূলত অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিড নেতাদের কাজ, যারা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।”
উল্লেখ্য, সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পাকিস্তানের পতাকা আঁকা নিয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে আস-সুন্নাহ হলের শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের প্রোডাকশন’ বলে মন্তব্য করেন ফরহাদ বিন বাসিত। এ সময় তিনি দম্ভোক্তি করে বলেন, “পাকিস্তানের পতাকা সর্বদা আমাদের পায়ের নিচে থাকবে। এটা অঙ্কন করতে আমাদের কেন অনুমতি লাগবে?” এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং তোপের মুখে পড়েন ওই ছাত্রদল নেতা।

