সিলেট ব্যুরো:-
“আগের ওরা আর বর্তমান এদের মধ্যে কোন তফাৎ নাই” ফেসবুকে সামান্য এই একটি পোষ্টকে কেন্দ্র করে সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে হামলার শিকার হয়েছেন সিলেট এমসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র, আনজুমানে তালামীযে ইসলামির দায়িত্বশীল ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী মিজানুর রহমান রিয়াদ। রিয়াদ জুলাই আন্দোলনেও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন বলে জানা যায়। তিনি এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ১১১ নাম্বার রুমে থাকেন। বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারী) রাত ১২ টার সময় এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগ ও গন মাধ্যমে দেয়া আহত রিয়াদের বক্তব্যে জানা যায়, তিনি ফেসবুকে শুধু একটি পোষ্ট করেছিলেন “আগের ওরা আর বর্তমান এদের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই” এই পোষ্টের জেরে তার উপর বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে।
তার রুমে ঢুকে ৮/১০ জন মিলে তাকে বেড়কভাবে পেটায়। অশালীন কথাবার্তা বলে হামলে করে তার উপর। যে ঘটনার আকস্মিকতা ও অপমানবোধে বাকরুদ্ধ তিনি।
রিয়াদের রুমমেট বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র জুনেদ আহমদ জানান, রাতের খাবার শেষে তারা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় দরজায় প্রচণ্ড আঘাতের শব্দ পান। দরজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে এমসি কলেজ ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জওহর লুকমান মুন্নার নেতৃত্বে ১০-১২জন শিবির কর্মী রুমে ঢুকে রিয়াদকে লাথি দিয়ে বিছানা থেকে নিচে ফেলে দিয়ে রড দিয়ে মাথাসহ সারা শরীরে আঘাত করে রক্তাক্ত রিয়াদকে টেনে হিঁচড়ে ফেলে যায়।এসময় আহত রিয়াদকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে এলে সেটিও ফিরিয়ে দেয়া বলে জানান।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায় তার। এমনকি তাঁকে উদ্ধার করতে আসা এক সহপাঠীর মানিব্যাগের টাকা রেখে ব্যাগ ফেরত দেয়া হয়। এক পর্যায়ে রিয়দকে সন্ত্রাসী বানিয়ে পুলিশের কাছে তুলে দেয়ারও চেষ্টা করা হয়।
কারা তার উপর হামলা করেছে এমন প্রশ্নে তিনি রিয়াদ জানান, এমসি কলেজ ছাত্রশিবিরের নেতা নাজমুল, সাদমান, ইসমাঈলসহ শিবিরের অন্যান্য নেতা কর্মীরা। এরা সবাই এমসি কলেজের শিক্ষার্থী বলে তিনি জানান।
বর্তমানে আহত রিয়াদ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদিকে রিয়াদকে দেখতে হাসপাতালে যান আনজুমানে তালামীযে ইসলামির নেতৃবৃন্দসহ রিয়াদের অন্যান্য সহপাঠিরা।
এ বিষয়ে জানতে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এমন কোন ঘটনা জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, আমাদের কাছে এখনও কেউ কোন অভিযোগ দেয় নাই।
হামলা ঘটনার ব্যাপারে সিলেট মহানগর শিবিরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক নাঈম হোসাইন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা খোঁজ খরব নিচ্ছি। কারন গভীর থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা আমাদের দায়িত্ব। ফ্যাসিস্টের দোসররা জুলাই বিপ্লবকে নানাভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। তারা সেই ভাবে কাজ করছে ও সেই ভাষায় কথাও বলছে। আমরা সর্তকতা অবলম্ব করছি, ঘটনার নৈপথ্যতা উদ্ঘাটনে। আমাদের কর্মীরা যদি এই হামলার সাথে জড়িত হয়, তাহলে সংগঠন তাদের ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে। তবে প্রকৃত ঘটনার উদ্ঘটানের পর এ নিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে আমাদের অবস্থান পরিস্কার করবো।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (মিডিয়া), বলেন, হামলার ঘটনাটি নিয়ে গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি আমরা। কেন ফেসবুকে কমেন্ট করা হলো, সেই উদ্দেশ্যও দেখতে হচ্ছে আমাদের। হামলার কারন, কেন হামলা করা হলো, কারা জড়িত , সেই বিষয়টিও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছি আমরা। এখনো কোন পক্ষের লিখিত অভিযােগ আমাদের কাছে না আসলেও বিষয়টি জুলাই বিপ্লবের চেতনার স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে কাজে নেমেছে পুলিশ। বর্তমানে অফিসার দায়িত্ব নিয়ে কাজে নেমেছে, আমাদের লক্ষ্য বিস্তারিত অনুসন্ধান। তিনি অরও বলেন, আহত রিয়াদের বাড়ী ওসমানীনগরে। তবে তার অবস্থা গুরুতর নয়।