’স্টাফ রিপোর্টার:
চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সাভারের আশুলিয়ায় গুলি করে ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর নৃশংস ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের এসআই শেখ আবজালুল হক। মঙ্গলবার মো. মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ তিনি দোষ স্বীকার করে বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করেন এবং নিহতদের পরিবার ও ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
জবানবন্দিতে আবজালুল জানান, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আশুলিয়া থানার ওসি এ. এফ. এম. সায়েদ তৎকালীন এমপি সাইফুল ইসলামের সরাসরি নির্দেশে আন্দোলন দমন ও বিরোধীজনদের গ্রেফতারে মাঠে নামতেন। ৫ আগস্ট সকালে তিনি থানায় ডিউটিতে যোগ দেন। সেদিন সারাদেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পর ওসি সায়েদ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যদের নিয়ে মোতায়েন ছিলেন।
এসআই আবজালুল বলেন, দুপুরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে ওসি সায়েদ থানায় ফিরে আসেন। বিকেলে বিজয় মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতার একটি দল থানার সামনে এলে ওসির সরাসরি নির্দেশে এএসআই বিশ্বজিৎসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থলেই কয়েকজন নিহত হন।
তিনি জানান, গুলিবিদ্ধদের লাশ ভ্যানে তুলে থানায় আনা হয়। এরপর ওসির নির্দেশে লাশগুলো পিকআপে তুলে নিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আবজালুলের ভাষ্য—“আমি কাছে গেলে তারা কথা বলা বন্ধ করে দেয়। তখন বুঝতে পারি, কোনো খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। আমি ভয়ে সিভিল পোশাকে পালিয়ে যাই।”
জবানবন্দিতে তিনি আরও বলেন, ১৫ আগস্ট থানায় এসে ইস্যুকৃত পিস্তল ও গুলি জমা দেওয়ার পর জানতে পারেন, সেদিনই লাশগুলো পোড়ানো হয় এবং পরে ওসি ও সংশ্লিষ্টরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্যান্টনমেন্টে চলে যান।
এসআই আবজালুল দাবি করেন, ঘটনার পর তৎকালীন ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি নুরুল ইসলাম, ঢাকা জেলার এসপি আসাদুজ্জামান রিপন, সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম ও অতিরিক্ত এসপি আব্দুল্লাহিল কাফির কোনো উদ্যোগ তিনি লক্ষ্য করেননি। চলতি বছরের মে মাসে গ্রেফতার হওয়ার পর বিবেকের তাড়নায় তিনি রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন।
জবানবন্দি শেষে আসামিপক্ষ আংশিক জেরা করে। বিচারক আজকের মতো জেরা মুলতবি করে আগামী দিনের তারিখ ধার্য করেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম জানান, আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর জীবিত থাকা একজনের লাশেও পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়—যা মানবতাবিরোধী অপরাধের জঘন্য উদাহরণ। এই ঘটনায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আটজন গ্রেফতার থাকলেও সাতজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। এসআই আবজালুল হক একমাত্র আসামি যিনি দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন।

