বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত নাম সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তাঁর আকস্মিক মৃত্যু আজও ঘুরে বেড়ায় এক প্রশ্ন নিয়ে— এটা কি আত্মহত্যা, না কি পরিকল্পিত হত্যা?
সিআইডি ও পিবিআই বছরের পর বছর ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বললেও, দুটি স্বীকারোক্তি সেই ধারণাকে নড়িয়ে দিয়েছে। রিজভী ও রুবির বয়ানে উঠে এসেছে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে চুক্তিভিত্তিক হত্যার লোমহর্ষক বিবরণ।
রিজভীর ১৯৯৭ সালের ১৬৪ ধারার জবানবন্দি অনুযায়ী, সালমান শাহকে হত্যা করা হয় তাঁর শাশুড়ি লতিফা হকের পরিকল্পনায়। পরিকল্পনার অংশ ছিলেন ডন, ডেভিড, ফারুক ও জাবেদ। সালমানের স্ত্রী সামিরা, শাশুড়ি লুসি এবং আত্মীয়া রুবি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।
রিজভীর বর্ণনা অনুযায়ী, ঘুমন্ত অবস্থায় সালমানের নাকে ক্লোরোফর্ম চাপা দেওয়া হয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এসে সালমানের পা বেঁধে দেন। পরে ইনজেকশন পুশ করা হয়, আর সালমান নিস্তেজ হয়ে পড়লে আজিজ ও ডন মিলে তাঁর দেহ সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দেন— যেন আত্মহত্যার মতো দেখায়।
দুই দশক পর, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশ্যে আসেন মামলার আরেক আসামি রুবি। ভিডিও বার্তায় তিনি চিৎকার করে বলেন, “সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি, তাকে খুন করা হয়েছে। এটা করিয়েছে সামিরার ফ্যামিলি।”
রুবির দাবি, তাঁর স্বামী জন চ্যান সালমানের শ্যালক রুমিকে দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়, পরে প্রমাণ গোপন করতে রুমিকেও হত্যা করা হয়।
এই ভয়ংকর অভিযোগগুলোর সঙ্গে মিলে যায় সালমানের মৃত্যুর দিনকার নানা অসঙ্গতি—
কেন তাঁর বাবাকে সকালে দেখা করতে দেওয়া হয়নি?
কেন ঝুলন্ত লাশের জিহ্বা বের হয়নি, যা ফাঁসের ক্ষেত্রে সাধারণ?
কেন লাশ হাসপাতালে নেওয়ার বদলে মেঝেতে তেল মালিশ করা হচ্ছিল?
কেন টেলিফোনের স্বয়ংক্রিয় উত্তর যন্ত্রটি উধাও হয়ে গেল?
আর কেন সামিরা ফ্ল্যাটের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ রেখে পাশের ফ্ল্যাটে গল্প করছিলেন?
এমনকি সালমানের সুটকেসে পাওয়া গিয়েছিল ভেজা কাপড়, খালি অ্যাম্পল ও সিরিঞ্জ, যা রহস্যকে আরও গভীর করে।
অবশেষে, দীর্ঘ ২৯ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর সালমানের মা নীলা চৌধুরীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন— অপমৃত্যুর মামলা এখন থেকে হত্যা মামলা হিসেবে তদন্ত হবে।
এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন—
নতুন তদন্ত কি পারবে উন্মোচন করতে সেই রাতের নির্মম সত্য?