রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রও সমানভাবে রাজি হলে নিউ স্টার্ট (New START) পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির সীমাবদ্ধতা আরও এক বছর মেনে চলতে প্রস্তুত মস্কো। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ তারিখে এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
শুক্রবার রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে পুতিন বলেন, এ সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ সুগম করতে পারে। তবে শর্ত দিয়ে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রকেও সমানভাবে সীমাবদ্ধতা মানতে হবে এবং কৌশলগত ভারসাম্য নষ্ট করার মতো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।
২০১০ সালে স্বাক্ষরিত নিউ স্টার্ট চুক্তির আওতায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ ১,৫৫০টি মোতায়েন করা কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড এবং ৭০০টি ডেলিভারি সিস্টেম—যেমন আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র, সাবমেরিন ও বোমারু বিমান—এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। দীর্ঘদিন ধরে এ চুক্তিকে দুই পরাশক্তির পারমাণবিক প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর সমঝোতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে আসছে।
চুক্তি নবায়ন বা নতুন কোনো সমঝোতা না হলে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র ভান্ডারের ওপর কোনো আইনি সীমা থাকবে না। এতে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা শুধু দুই দেশ নয়, বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
তবে জটিলতা রয়ে গেছে। কার্যকর যাচাই-ব্যবস্থা, পারস্পরিক আস্থা, এবং ইউক্রেন যুদ্ধ, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও ন্যাটো সম্প্রসারণ নিয়ে উত্তেজনা আলোচনার পথে বড় বাধা হয়ে আছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র আগেই জানিয়েছে, ভবিষ্যতের যে কোনো পারমাণবিক চুক্তিতে চীনকেও অন্তর্ভুক্ত করতে চায় তারা। রাশিয়া এ শর্তকে আলোচনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করছে।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পুতিনের এ প্রস্তাব একদিকে রাশিয়াকে শান্তিপ্রিয় শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ তৈরি করছে আলোচনায় বসতে। তবে দুই পরাশক্তির রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধ এতটাই গভীর যে স্বল্পমেয়াদি এ সমঝোতা দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা আনতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।