তুরস্কের একচেটিয়া অর্থনৈতিক জলসীমার (Exclusive Economic Zone) মধ্যে বেসামরিক জাহাজে ধারাবাহিক ড্রোন হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। সম্প্রতি কৃষ্ণসাগরে একের পর এক হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে।
এর আগে গত ২৮ নভেম্বর কৃষ্ণ সাগরে দুটি বাণিজ্যিক জাহাজে এবং এরপর মঙ্গলবার আরও একটি রুশ জাহাজে ড্রোন হামলা করা হয়।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ভারশিনিন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন,
“স্বাভাবিকভাবেই তুরস্কের অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে জাহাজে এই ধরনের হামলার অনুশীলন সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আমরা এগুলোকে সরাসরি সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে দেখি এবং এর কঠোর নিন্দা জানাই।”
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে ইউক্রেন সরকার বেসামরিক স্থাপনায় যে হামলাগুলো চালিয়েছে, তার মধ্যে ক্রিমিয়ান সেতু ও অন্যান্য অবকাঠামোতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এমন হামলার ধারাবাহিকতায় বেসামরিক জাহাজে আক্রমণ এবং রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নাবিকদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা-ও এসব হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানান। তিনি বলেন,
ইউক্রেনের গোপন নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ইউক্রেনীয় মিডিয়ায় হামলার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করছে, যা আসলে বেশ স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয়—সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কিয়েভ সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে।
রাশিয়ার অভিযোগ অনুযায়ী, সর্বশেষ হামলাটি ঘটে মঙ্গলবার কৃষ্ণ সাগরে, যখন উদ্ভিজ্জ তেল বহনকারী রাশিয়ান কার্গো জাহাজ ‘মিডভোলগা–২’ জর্জিয়ার উদ্দেশে রওনা ছিল। এই হামলায় একটি ড্রোন জাহাজটির উপরিভাগে আঘাত হানে। ফলে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হলেও কোনো নাবিক আহত হননি।
ঘটনাস্থলটি ছিল তুরস্কের উপকূল থেকে প্রায় ৮০ নটিক্যাল মাইল দূরে। হামলার পর জাহাজটি নিরাপদেই তুরস্কের সিনোপ বন্দরে পৌঁছে যায়।
এর আগেও, গত ২৮ নভেম্বর, পশ্চিম কৃষ্ণ সাগরে অবস্থিত তুরস্কের উপকূল থেকে যথাক্রমে ২৮ ও ৩৮ নটিক্যাল মাইল দূরে দুটি ট্যাংকার জাহাজ হামলার শিকার হয়। হামলাকৃত জাহাজ দুটি ছিল গাম্বিয়ার পতাকাবাহী ট্যাংকার ‘কাইরোস’ ও ‘বিরাট’।
এদিকে পৃথক এক প্রতিক্রিয়ায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে বলেন,
“আমাদের একচেটিয়া অর্থনৈতিক জলসীমার ভেতরে জাহাজে হামলার ঘটনা ইউক্রেন সংঘাতের ভয়াবহ বৃদ্ধি নির্দেশ করছে। এ ধরনের আক্রমণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়—এটি একেবারেই অমার্জনীয়।”
এই ধারাবাহিক হামলায় কৃষ্ণসাগরের নৌপথে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যে আশঙ্কা বাড়ছে, বেসামরিক নৌপরিবহন লক্ষ্য করে এ ধরনের হামলা গোটা অঞ্চলে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

