বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনরুদ্ধার এবং রেমিট্যান্স প্রবাহে অভূতপূর্ব বৃদ্ধির ফলে দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা এবং আস্থার পুনর্জাগরণের ইঙ্গিত মিলছে। এটি বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্য ও বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতির কার্যকারিতা নির্দেশ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বুধবার (২৯ অক্টোবর) প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আইএমএফের বিপিএম৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলে রিজার্ভের পরিমাণ ২৭.৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ৫ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান। যদিও আদর্শ রিজার্ভ হওয়া উচিত কমপক্ষে ৬ মাসের আমদানি ব্যয় কভার করার মতো, বর্তমান পরিস্থিতি মোটের ওপর স্বস্তিদায়ক।
রেমিট্যান্স প্রবাহে এই বৃদ্ধি ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রাপ্ত রেমিট্যান্স ৭.৫৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ১৬.২৩% বৃদ্ধি।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাংলাদেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে। এই তহবিল কেবল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করেনি, বরং টাকার বিনিময় হারও স্থিতিশীল করেছে।
আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপপরিচালক থমাস হেলব্লিং বলেন, দেশের লেনদেন ভারসাম্যের উপর চাপ বজায় রাখায় রিজার্ভ বৃদ্ধিকে আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচির একটি কেন্দ্রীয় লক্ষ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার ও অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন উভয়েই রেমিট্যান্স বৃদ্ধিকে রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সরকার প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ২.৫% নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে। এছাড়া হুন্ডি ও অবৈধ চ্যানেলের ব্যবহার কমে যাওয়ায় আনুষ্ঠানিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠানো রেমিট্যান্স এখন দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশেষভাবে স্বস্তি সৃষ্টি করছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ডিএমডি মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের ডিএমডি আব্দুল কায়উম চৌধুরী উভয়ই নিশ্চিত করেছেন, চলমান বৃদ্ধি অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে দেশের জন্য তাৎক্ষণিক স্বস্তি প্রদান করছে।







