সত্যজিৎ দাস:
হিন্দু ধর্মীয় ক্যালেন্ডারের এক বিশেষ তিথি,”মধু কৃষ্ণা ত্রয়োদশী” বা “মহা বারুণী তিথি” আমাদের জীবনকে আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করার এক অপূর্ব সুযোগ। এই তিথি,যা শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণ পক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে পালিত হয়,শুধু শিব উপাসনার জন্য নয়,বরং আত্মশুদ্ধির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
এই দিনটি প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণ পক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে পালন করা হয়। আধ্যাত্মিকতা, শুদ্ধতা এবং শিব উপাসনার এক অনন্য সময় হিসেবে এটি পরিচিত। এই তিথির বিশেষ তাৎপর্য, শিব পুরাণ,বেদ এবং গরুড় পুরাণের শ্লোকের মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়।
প্রাচীন বেদ ও পুরাণে একে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, এবং এই দিনে শিবের পূজা,মন্ত্রোচ্চারণ, ত্যাগ ও সাধনার মাধ্যমে জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
শিব পুরাণে শিবের মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে অনেক শ্লোকে। একটি অতি পরিচিত শ্লোক,যা শিবের অনন্ত শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে,তা হল:
“শিবায় বিষ্ণু রূপায় শিবায় হর হরায় চ।
নমঃ শিবায় গুরুবে মহাদেবায় তেজসে॥”
বাংলায় অনুবাদ:
“শিবকে প্রণাম, যিনি বিষ্ণুর রূপে,যিনি হরের রূপে,যিনি মহাদেবের রূপে,যাঁর মধ্যে রয়েছে অসীম শক্তি।”
এই শ্লোকটির মাধ্যমে শিবের একাধিক রূপের মহিমা প্রকাশিত হয়,যা এই তিথিতে আমাদের জীবনে শান্তি এবং সমৃদ্ধি আনার প্রেরণা দেয়।
বেদ পুরাণের এক বিশেষ শ্লোক রয়েছে যা শিবের পূজা এবং শান্তি লাভের গুরুত্ব বোঝায়:
“ওম হ্রীং ওম নমঃ শিবায় চ মহাদেবায় চ শান্তায় চ মহাশক্তিয়ে চ স্বাহা॥”
বাংলায় অনুবাদ:
“ওম হ্রীং, ওম নমঃ শিবায়,মহাদেবায়,শান্তায়,মহাশক্তি, স্বাহা।”
এই শ্লোকটি শিবের শান্তিপূর্ণ শক্তির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ শান্তি লাভের প্রেরণা দেয়।
গরুড় পুরাণে শিবের কীর্তন এবং পূজার মাধ্যমে শান্তি এবং শুদ্ধতা লাভের কথা উল্লেখ করা হয়েছে:
“যত্র যত্র হরে: কীর্তনং ধর্মং শুদ্ধিমু চ্যতে।
সর্বপাপবিনির্মুক্তঃ শম্ভাবাভেন সদা শিবঃ॥”
বাংলায় অনুবাদ:
“যেখানে যেখানে শিবের কীর্তন বা স্তব করা হয়,সেখানে সেখানে ধর্ম ও শুদ্ধতার আলো আসে। সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে শিব সর্বদা শান্তির অধিকারী।”
এটি আমাদের শেখায় যে,শিবের কীর্তন কিংবা পূজা করলে আমরা শুধুমাত্র পাপমুক্ত হই না,বরং আধ্যাত্মিকভাবে শুদ্ধও হয়ে উঠি।
মধু কৃষ্ণা ত্রয়োদশী এবং আমাদের জীবন:-
মধু কৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথির মাধ্যমে শিবের পূজা এবং বিশেষ মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে আমাদের জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসতে পারে। শিব পুরাণ,বেদ এবং গরুড় পুরাণের শ্লোকগুলো আমাদের জীবনে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে সহায়ক। এই তিথিতে শিবের উপাসনা, ধ্যান এবং সাধনা আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতির পথপ্রদর্শক হতে পারে।
প্রত্যেকটি তিথি,বিশেষত মহা বারুণী তিথি, আমাদের জীবনে গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহন করে। এই দিনটির উদ্দেশ্য একটাই: আত্মশুদ্ধি এবং জীবনের সকল অশান্তি থেকে মুক্তি। শিবের অনন্ত শক্তি,যার মধ্যে রয়েছে ধৈর্য,শান্তি এবং সমর্পণ, আমাদের জীবনে প্রবাহিত হোক।
এই মহা বারুণী তিথিতে শিবের পূজা এবং মন্ত্রোচ্চারণে যেন আমাদের জীবন পূর্ণাঙ্গ হয়,আমাদের মন শান্ত থাকে এবং আমরা শুদ্ধ হয়ে উঠে সত্যের পথে চলতে পারি। এই তিথি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়,প্রকৃত শান্তি তখনই আসে,যখন আমরা আমাদের অন্তরে শিবের উপস্থিতি অনুভব করি এবং তাঁর আদর্শে চলি।