সত্যজিৎ দাস:
“ওঁ কল্কি দেবায় বিদ্মহে,মহামুনয়ে ধীমহি,তন্নো বিষ্ণুঃ প্রচোদয়াত্॥”
মানবসভ্যতার ইতিহাসে প্রতিটি যুগেরই একটি চূড়ান্ত পর্যায় থাকে,যেখানে ন্যায় ও অন্যায়ের সংঘর্ষ তীব্র হয়ে ওঠে। হিন্দুধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, ভগবান বিষ্ণু যুগে যুগে অবতাররূপে আবির্ভূত হন, যখন পৃথিবী ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তাঁর দশম ও চূড়ান্ত অবতার “কল্কি”,যিনি কলিযুগের অবসান ঘটিয়ে নতুন এক শুভযুগের সূচনা করবেন।
কলিযুগ,চার যুগের শেষ অধ্যায়,যেখানে সত্য,ধর্ম ও ন্যায়বোধ মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে যাবে। লোভ, প্রতারণা ও ক্ষমতার লালসা সমাজকে গ্রাস করবে। ধর্মের মূল ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়বে,এবং শিষ্টদের ওপর দুষ্টদের অত্যাচার চরমে পৌঁছাবে। তখনই শুরু হবে এক নতুন যুগের অপেক্ষা—একজন ন্যায়ের দূতের প্রয়োজন অনুভূত হবে,যিনি আসবেন পৃথিবীকে শুদ্ধ করতে।
কল্কির আবির্ভাব: এক আশার আলো:-
শাস্ত্র অনুযায়ী,কল্কি জন্ম নেবেন ‘সম্ভল’ নামে এক গ্রামে,বিষ্ণুযশা ও সুমতি দেবীর সন্তান হিসেবে। তিনি দেবদত্ত নামের এক শুভ্র ঘোড়ায় আরোহণ করে হাতে উজ্জ্বল তরবারি ধারণ করবেন। তাঁর আগমন কোনো সাধারণ যুদ্ধের জন্য নয়, বরং এটি হবে ন্যায়ের পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক মহাযুদ্ধ।
ধ্বংস থেকে সৃষ্টি:
কল্কির প্রধান লক্ষ্য হবে সমাজকে কলুষমুক্ত করা। তিনি অত্যাচারী ও অসৎ শক্তিগুলোর বিনাশ ঘটিয়ে পৃথিবীতে শান্তি ও সাম্য ফিরিয়ে আনবেন। এই ধ্বংসই হবে এক নতুন সূচনার পথ। কলিযুগের অবসানে সত্যযুগের পুনরুত্থান হবে,যেখানে মানুষ আবার সত্য,ন্যায় ও মানবিকতাকে আঁকড়ে ধরবে।
কল্কি কেবল এক পৌরাণিক চরিত্র নন,তিনি এক প্রতীক—ন্যায়ের,সাহসের এবং পরিবর্তনের। তাঁর কাহিনি আমাদের শেখায়,যতই অন্ধকার নেমে আসুক,শেষ পর্যন্ত সত্যেরই জয় হয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়,পৃথিবী কখনোই অন্যায়ের কাছে হার মানে না,বরং প্রয়োজন হলে নতুন সূর্যোদয়ের জন্য এক মহাযুদ্ধের জন্ম দেয়।
সময়ের নিয়ম বদলায়,কিন্তু ন্যায়ের শাশ্বত সত্য কখনো বদলায় না। কল্কি সেই শাশ্বত সত্যেরই দূত, যিনি একদিন পৃথিবীতে আসবেন, বা হয়তো আমাদের মধ্যেই তাঁর আভাস রয়েছে—প্রতিটি ন্যায়ের সংগ্রামে,প্রতিটি অন্যায়ের প্রতিরোধে।