ইসলামে কোরবানি শুধুমাত্র পশু জবাই নয়, বরং এটি আত্মত্যাগ ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক গভীর আধ্যাত্মিক চর্চা। ‘কোরবান’ শব্দটি এসেছে আরবি ‘কুরবত’ থেকে, যার অর্থ নৈকট্য। ঈদুল আজহায় কোরবানির মাধ্যমে মুসলমানরা তাঁদের প্রিয়তম জিনিস আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করার প্রস্তুতি ও মানসিকতা প্রকাশ করে।
ধর্মীয় বিশ্লেষকদের মতে, কোরবানি শুধু একটি আচার নয়—এটি মুসলমানের ঈমান, আনুগত্য ও তাকওয়ার বহিঃপ্রকাশ। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না পশুর গোশত কিংবা রক্ত, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।” (সুরা হজ: ৩৭)
কোরবানির সূচনা সম্পর্কে ইসলামী স্কলাররা বলেন, মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম কোরবানির ঘটনা ঘটে আদম (আ.)-এর দুই পুত্রের মাধ্যমে। তবে কোরবানির প্রকৃত রূপ ফুটে ওঠে ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আ.)-এর ঐতিহাসিক আত্মত্যাগের ঘটনায়। আল্লাহর আদেশে ইব্রাহিম (আ.) যখন প্রিয় পুত্রকে কোরবানি দিতে উদ্যত হন, তখন আল্লাহ তাঁর এই নিঃশর্ত আনুগত্য ও ঈমানের পরীক্ষা গ্রহণ করে কোরবানি হিসেবে একটি পশু পাঠিয়ে দেন।
বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা এই স্মৃতিকে চিরন্তন রেখে প্রতিবছর ঈদুল আজহার দিনে নির্ধারিত পশু আল্লাহর নামে জবাই করে থাকেন। এটি শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং নিজের ভেতরের খারাপ প্রবৃত্তি ও আত্মমোহকে কোরবানি করে স্রষ্টার পথে নিজেকে সঁপে দেওয়ার অঙ্গীকার।
ধর্মীয় সূত্রে জানা যায়, কোরবানির পশু হতে হবে নির্দিষ্ট বয়স ও শারীরিকভাবে নির্দোষ। কোরবানি দেওয়ার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা বাধ্যতামূলক। কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করে—এক ভাগ আত্মীয়স্বজন, এক ভাগ দরিদ্র, এবং এক ভাগ নিজের জন্য রাখা ইসলামী আদর্শের অংশ।
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কোরবানির প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা আহ্বান জানিয়েছেন, কোরবানিকে যেন কেবল সামাজিক রেওয়াজ হিসেবে না দেখে, বরং এর আত্মিক দিকটি উপলব্ধি করে পালন করা হয়।