মশিউর রহমান রাসেল,স্টাফ রিপোর্টারঃ
সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচার বন্ধ করতে হলে কোরআনের আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশ স্বাধীন করা হয়েছিল জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে নেওয়া হয়েছে, আর ২০২৪ সালে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়ইনি। যারা ভোটকেন্দ্রে গিয়েছে, তাদের বলা হয়েছে—ভোট দেওয়া হয়ে গেছে, আপনাকে আর ভোট দিতে হবে না।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় ঝালকাঠি শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জেলা কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “ভোটের গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। তারা ১০ টাকায় চাল বিক্রির কথা বলে ৭০ টাকায় বিক্রি করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে যারা মানুষ হত্যা করেছিল, যারা বলেছিল দেশ ছেড়ে যাবে না, তারা পালানোর জন্য ইঁদুরের গর্ত খুঁজেও পায়নি। ঝালকাঠির আশপাশে অনেক ভালো ইসলামী ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, যেমন—আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী (রহ.), ছারছিনার পীর, চরমোনাই পীর ও নেছারাবাদের পীর। তারা ইসলামের খেদমত করে যাচ্ছেন। ঝালকাঠির মাটি ইসলামের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, আগামী দিনে এখানে ইসলামের পক্ষে জোয়ার উঠবে।”
তিনি আরও বলেন, “বিগত সরকার আমাদের ওপর অনেক নির্যাতন চালিয়েছে। তারা জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু মাত্র চার দিনের মধ্যে আল্লাহ স্বৈরাচারকে নিষিদ্ধ করে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছেন। বাংলাদেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হলে আল্লাহর আইন চালু করতে হবে। মানুষের আইনে ভুল থাকতে পারে, কিন্তু আল্লাহর আইনে কোনো ভুল নেই। যেদিন আল্লাহর আইন চালু হবে, সেদিন থেকেই বাংলাদেশ থেকে জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচার বন্ধ হবে। ইসলাম একটি আলো, আর বাকি সব অন্ধকার। আলো এলে অন্ধকার থাকে না, কিন্তু বর্তমানে অন্ধকার এখনও বিরাজ করছে। আমরা আল্লাহর আইন কায়েম করতে চাই। যত অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম ও নির্যাতন আছে, তা বাংলাদেশ থেকে নির্মূল করতে চাই। এজন্য স্বাধীনতার আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।”
তিনি বলেন, “ইতিপূর্বে আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, বস্তুবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র দেখেছি। কোনো মতবাদই শান্তি দিতে পারেনি। ফলে গোটা জাতি হতাশ হয়ে পড়েছে এবং গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। একমাত্র ইসলামী মতবাদই শান্তি দিতে পারবে। এজন্য সকল আলেম-ওলামাদের নিয়ে একটি ভোটের বাক্স বসাতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বিগত সরকার একটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র হত্যা করে দাফন দিয়েছিল। তারা সকল পত্রিকা ও প্রচারমাধ্যম বন্ধ করে দিয়ে তাদের অনুসারী কয়েকটি মিডিয়া চালু রেখেছিল। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছিল। এখন পর্যন্ত তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। আমরা দ্রুত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফেরতের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।”
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা আমির অ্যাডভোকেট মো. হাফিজুর রহমান। সঞ্চালনায় ছিলেন নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট বিএম আমিনুল ইসলাম ও সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মো. ফরিদুল হক। বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য, বরিশাল মহানগর আমির অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর, বরিশাল অঞ্চল টিম সদস্য এ কে এম ফখরুদ্দিন খান রাযী, বরিশাল জেলা আমির অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুর জব্বার, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, পিরোজপুর জেলা আমির মো. তোফাজ্জেল হোসেন ফরিদ, জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ব্যবসায়ী বিভাগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ঝালকাঠি-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী শেখ নেয়ামুল করিম, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ড. ফয়জুল হক, ঝালকাঠি জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হাই ও জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এম. সায়েম প্রমুখ।