সত্যজিৎ দাস:
ওঁ নমঃ শিবায়
“শিব” -তিনি একাধারে বিনাশের দেবতা,আবার শান্তির আধার। তিনি মহাকালের ধারক,মহাবিশ্বের চিরন্তন শক্তি। সনাতন শাস্ত্র বলে, প্রকৃতির তিন গুণ (সত্ত্ব,রজ ও তম) এই তিনটি শক্তির মধ্যে শিব তম গুণের প্রতীক,যা সংহার ও রূপান্তরের মাধ্যমে নতুন সৃষ্টির পথ খুলে দেয়।
কেন মহাশিবরাত্রি পালিত হয়?
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে,ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে ভগবান শিব ও দেবী পার্বতীর মহাবিবাহ সম্পন্ন হয়। এই দিনটি শুধু এক শুভদিবস নয়, এটি আত্মজাগরণেরও প্রতীক। শিবরাত্রিতে উপবাস, রাত্রি জাগরণ, ও শিবলিঙ্গে জল নিবেদনের মধ্য দিয়ে ভক্তরা মহাদেবের আশীর্বাদ কামনা করেন।
শিবলিঙ্গের মাহাত্ম্যঃ-
শিবলিঙ্গ কেবল একটি প্রতীক নয়,এটি মহাবিশ্বের সৃষ্টির দর্শন। ‘লিঙ্গ’ শব্দের অর্থ হলো যেখানে সব কিছু বিলীন হয়,আবার যেখান থেকে নতুনের জন্ম হয়। বৈদিক শাস্ত্রে বলা হয়েছে, ব্রহ্মা সৃষ্টি করেন, বিষ্ণু পালন করেন,আর শিব সংহার করেন—কিন্তু এই সংহার মানেই শেষ নয়,বরং নতুন শুরুর পূর্বঘোষণা।
রাত্রি জাগরণের তাৎপর্যঃ-
মহাশিবরাত্রিতে রাত্রি জাগরণ শুধু এক ধর্মীয় আচার নয়,এটি আত্মবিশ্লেষণের সময়। শিবরাত্রি এমন এক মুহূর্ত,যখন জগতের সমস্ত অন্ধকারের মধ্যেও চেতনার দীপ জ্বালানো হয়। এই রাতে বিশ্বাস করা হয় যে,ধ্যান ও উপবাস করলে মনের যাবতীয় নেগেটিভ শক্তি দূর হয় এবং জীবনে নতুন দিশা মেলে।
শিবের দর্শন: ধ্বংসই কি শেষ ?
শিব শুধু সংহারকর্তা নন,তিনি পুনর্জন্মেরও প্রতীক। মহাদেব আমাদের শেখান,জীবনের প্রতিটি ধ্বংস মানেই শেষ নয়, বরং নতুন কিছু সৃষ্টির সূচনা। ব্যক্তি থেকে সমাজ; সব ক্ষেত্রেই এই চক্র চলমান। আমাদের জীবনে যে কষ্ট, যে প্রতিকূলতা আসে, তা হয়তো পুরনো কোনো অধ্যায়ের সমাপ্তি, কিন্তু সেটিই আমাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়।
এই মহাশিবরাত্রিতে আসুন,আমরা শুধু প্রথাগত উপাসনার মধ্যে আটকে না থেকে শিবের প্রকৃত দর্শনকে উপলব্ধি করি। মোহ, ভয়, লোভ, ও হতাশার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার শিক্ষা নিই মহাদেবের কাছ থেকে। কারণ শিবই একমাত্র দেবতা,যিনি ধ্বংসের মধ্য দিয়েই নতুন পথ দেখান।